রাজশাহীতে উপজেলা ভোটে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন
নিজস্ব প্রতিবেদক : পঞ্চম উপজেলা নির্বাচন শতভাগ নিরপেক্ষ করতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী প্রশাসন। ভোটের আগের দিন দুর্গাপুরে ভোটে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ এনে তিনজন জনপ্রতিনিধিসহ ১২ জনকে পাঁচদিনের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তারা সবাই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। এদের মধ্যে রয়েছেন দুর্গাপুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জাল হোসেন।
সাজাপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজহার আলী, ঝালুকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাহার আলী, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মজনু, উপজেলা বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি নুর হোসেন, পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোলাইমান আলী, পৌরসভা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরিফ, দৌলিয়া বাড়ি ইউপি আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, মেয়র তোফাজ্জাল হোসেনের ছেলে মনিরুজ্জজামান মনি, ভাগ্নে রবিউল ইসলাম রবিন ও ছাত্রলীগ কর্মী সাকিল এবং শিমুল।
রাজশাহীর নয়টি উপজেলায় তফসিল হলেও নির্বাচন হবে আটটিতে। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে পবা উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে না। বাকি আট উপজেলায় একযোগে ৫২২টি কেন্দ্রে রোবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহন করা হবে। এর মধ্যে ২২২টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্বাচন ঘিরে তিনস্তরের নিরাপত্তার কথা জানিয়েছেন পুলিশ ও নির্বাচন কর্মকর্তারা। পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যের পাশাপাশি নিরাপত্তায় থাকবে বিজিবি।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে নির্বাচনী সরঞ্জাম ভোটকেন্দ্রে পাঠানো হয়।’’
তিনি বলেন, রাজশাহীর আট উপজেলায় প্রার্থী রয়েছে ৬৯ জন। এর মধ্যে চারজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। ফলে ৬৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বি করছেন। এর মধ্যে ছয়টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ১৬ জন, ছয়টি উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৮ জন এবং আটটি উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩১ জন। বাঘা ও মোহনপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে এবং গোদাগাড়ী ও মোহনপুর উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়েছেন।
রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও জ্যেষ্ঠ সহকারি পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, ‘‘উপজেলা নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কেন্দ্রের নিরাপত্তা ছাড়াও থাকছে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। এতে দায়িত্ব পালন করবেন জেলা পুলিশের প্রায় দুই হাজার সদস্য।’’
তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবার বিকেলে জেলা পুলিশ লাইন্স মাঠে নির্বাচনে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ। এ সময় তিনি নির্বাচনে শতভাগ নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজশাহী বিজিবি-১ এর অধিনায়ক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, রাজশাহীতে নির্বাচনের নিরাপত্তার জন্য তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহল শুরু করেছে। ভোটের দিন ২০ থেকে ২৫ প্লাটুন বিজিবি মাঠে থাকবে।
সহকারি পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, ‘শুক্রবার মধ্য রাত থেকে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু মজিদের সমর্থকরা বিধি ভঙ্গ করে বৈঠক করে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল। এই অপরাধে তাদের আটক করা হয়েছে। এ সময় মেয়র তোফাজ্জল হোসেনের কাছে তার লাইসেন্সন করা অস্ত্র পাওয়া যায়। নির্বাচন কেন্দ্র করে অস্ত্র জমা দেয়ার কথা থাকলেও তিনি জমা দেননি। তাদের আটকের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার হামিদ ও জর্জ মিত্র চাকমা উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে প্রত্যেককে পাঁচদিন করে কারাদন্ড দেয়া হয়।’
তিনি বলেন, নির্বাচন শতভাগ নিরপেক্ষ করতে পুলিশ প্রতিজ্ঞবদ্ধ। প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই আট উপজেলায় ৫২২টি ভোটকেন্দ্র মধ্যে ২২২টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। ঝুঁকিপূর্ণ ও সাধারণ কেন্দ্র ধরে নিরাপত্তা ছক তৈরি করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ১৫ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য দায়িত্বে থাকবে। আর সাধারণ কেন্দ্রে থাকবে ১৩ জন।
গোদাগাড়ী উপজেলায় ৯৪ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৩৬টি ঝুঁকিপূর্ণ, তানোরে ৫১ কেন্দ্রে মধ্যে ২৮টি, বাগমারায় ১০৬টির মধ্যে ৩২টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও দুর্গাপুরের ৫৩ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৯টি, পুঠিয়ায় ৬৩ ভোটকেন্দ্রের ৩৪টি, চারঘাটে ৫২টির মধ্যে ২৮টি, মোহনপুরের ৪৪টির মধ্যে ২৩টি এবং বাঘা উপজেলার ৫৯ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২২টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
No comments