আড়ানীতে একই লাইনে দুই ট্রেন, মুখোমুখি সংঘর্ষ থেকে রক্ষা!
নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঘা:
রাজশাহীর বাঘায় মুখোমুখি সংঘর্ষ থেকে রক্ষা পেয়েছে যাত্রীবাহী দু’টি ট্রেন। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার আড়ানী রেলওয়ে স্টেশনে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। এসময় খুলনা থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর একটি ট্রেন একই লাইনে চলে এলে মুখোমুখি সংঘর্ষের উপক্রম হয়। তবে ড্রাইভারের বুদ্ধিমত্তার কারণে প্রাণে রক্ষা পায় উভয় ট্রেনের প্রায় এক হাজার যাত্রী।
ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে রাজশাহী আড়ানী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার একরামুল হক ও পয়েন্টম্যান রওশন আলীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টম্যানের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটতে যাচ্ছিল। দায়িত্বে অবহেলার জন্য ঘটনার পরপরই তাৎক্ষণিকভাবে আড়ানী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টম্যানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা ঈশ্বরদীগামী সিক্স ডাউন উত্তরা মেইল ট্রেনটি বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আড়ানী রেলওয়ে স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় খুলনা থেকে রাজশাহীগামী আন্তঃনগর কপোতাক্ষ ট্রেনটি একই লাইনে চলে আসে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আন্তঃনগর কপোতাক্ষ ট্রেনটির আড়ানী রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রমের জন্য দুই নম্বর লাইন ক্লিয়ার থাকার কথা ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিতে দুই নম্বরের পরিবর্তে এক নম্বর লাইন ক্লিয়ার ছিল। ফলে এক নম্বর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনটির মুখোমুখি হয় আন্তঃনগর কপোতাক্ষ ট্রেন।
সূত্র জানায়, কপোতাক্ষ ট্রেনের চালক রুহুল আমিন সিরাজ এক নম্বর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনটি দেখতে পেয়ে মুখোমুখি হওয়ার ১৫ গজ দূরে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনটি থামিয়ে দেন। কড়া ব্রেকে ট্রেনটি থেমে গেলে দুটি ট্রেন মুখোমুখি সংঘর্ষ থেকে রক্ষা পায়। পরে আন্তঃনগর কপোতাক্ষ ট্রেনটি পেছন দিকে ব্যাক করে ঘটনার ৩০ মিনিট পর দুই নম্বর লাইন দিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আড়ানীর স্টেশন মাস্টার একরামুল হক বলেন, পয়েন্টম্যানের ভুলের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য আধা ঘন্টা ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। পরে স্বাভাবিক নিয়মে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
আড়ানী স্টেশনের পয়েন্টম্যান রওশন আলী বলেন, আমি কিছুদিন আগে স্ট্রোক করে প্রতিবন্ধীর মতো হয়ে পড়েছি। দ্রুত চলাচল করতে সমস্যা হয়। আমি পয়েন্টস ঠিক করতে যাওয়ার আগেই আন্তঃনগর কপোতাক্ষ ট্রেন আড়ানী স্টেশনে ঢুকে পড়ে। তবে চালক তার বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মুখোমুখি হওয়ার আগে ট্রেনটি থামিয়ে দেন।
কপোতাক্ষ ট্রেনের চালক রুহুল আমিন সিরাজ বলেন, আড়ানী স্টেশনে আন্তঃনগর কপোতাক্ষ ট্রেনের যাত্রাবিরতি নেই। নিয়ম অনুযায়ি ট্রেন চলছিল। আড়ানী রেল স্টেশনের পূর্ব দিকের পয়েন্ট পার হওয়ার পর দেখি যে এক নম্বর লাইন দিয়ে ট্রেন যাচ্ছে, সেই লাইনে আরেকটি ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। আমি ট্রেনটির মুখোমুখি হওয়ার আগেই কৌশলে জরুরি ব্রেক করে ট্রেনটি থামিয়ে দেই।
উত্তরা ট্রেনের চালক রাজু আহম্মেদ বলেন, যে লাইনে আমার ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল, সেই লাইন দিয়ে আরেকটি ট্রেন আসা দেখে যাত্রীরা আতঙ্কে ছুটোছুটি শুরু করে। তবে আল্লাহ পাক সকলকে হেফাজত করেছেন।
No comments