বাঘায় শীতের কষ্টে ভুগছে সমেস-মেহেরুন্নেছা দম্পতির এতিম ও বৃদ্ধাশ্রমের অনাথরা শীতের তীব্রতায় কর্মহীন হয়ে পড়ছেন শ্রমজীবী মানুষ
বাঘা প্রতিনিধি :
দিনে সূর্যের দেখা নেই। সন্ধ্যার পর ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাট। শীতের তীব্রতায় জনশূন্যে হয়ে পড়ছে গুরুত্বপূর্ণস্থান আর কর্মহীন হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। শীতবস্ত্র অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন অনেকেই। খড়-কুটা জ্বালিয়ে হাত-পা তাপিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন শীতে কাহিল মানুষগুলো। সবচেয়ে দূর্ভোগে পড়েছেন শিশু, বৃদ্ধ আর কর্মজীবী মানুষ ।
পর্যপ্ত শীত বস্ত্রের অভাবে তাদের মতো শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে বেকায়দায় আছেন সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন ও বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক। ১৬৬ জন এতিম শিশু আর ৬০ জন বৃদ্ধের অনেকেরই শীতবস্ত্র নেই। বিগত বছরগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় শীতবস্ত্র পেলেও এবার তা পাননি। এতিম ও বৃদ্ধদের নিয়ে অসায়ত্ব জীবন যাপনের কথা জানালেন সেখানকার পরিচালক শমেস ডাক্তার ও তার সহধর্মীনি বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক মেহেরুন্নেছা।
রোববার (২২-১২-২০১৯) দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল,ইটের দেওয়ালের উপরে টিনসেট ঘরের বাইরে-ভেতরে শিশুদের কোলাহল। অপরদিকে প্রাচীর বেষ্টিত পৃথক পৃথক কক্ষের ভেতরে ঠাঁই পেয়েছে কর্মক্ষম থেকে জীবনের আনন্দ-বেদনা আর সব প্রতিকূলতাকে পার করে আসা অসহায়ত্ব বৃদ্ধ মানুষ। তাদের মধ্যে জীবন সায়াহ্নে এসে অসহায় হয়ে পড়ে আছে বেশিরভাগই নারি। এদের কল্যাণে গড়ে তোলা হয়েছে একটি বৃদ্ধাশ্রম। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মমতাজ-আজিজ বৃদ্ধাশ্রম’। বাইরের সাইন বোর্ডে লেখা ‘সরের হাট কল্যাণী শিশু সদন’ এর ভেতরে প্রবেশ করেই শিশুদের পাশাপাশি দেখা মেলে ভাগ্যবিড়ম্বিত কিছু অসহায় বৃদ্ধ নারি পুরুষের। ৮ বছরের তুহিন,১০ বছরের তিশা ও ১২ বছরের রাকিবসহ এতিমখানা ও বৃদ্ধাশ্রমে থাকা হালেমা, জাম্বিয়া, আছিয়া, মাজদার ও হযরতের কথার ভঙ্গিতে নিশ্চিত হওয়া যায়, নিঃসঙ্গতা ও দুরবস্থার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই তাদের। অর্থাভাবে বেশির ভাগই সুযোগ-সুবিধা, যথাযথ যতœ ও তত্ত¡াবধানের দিক দিয়ে অপ্রতুল। শীতে যবুথবু এসব শিশু ও বৃদ্ধরা দু’মুঠো খেতে পারলেও শীত বস্ত্রের অভাবে কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।
‘সরের হাট কল্যাণী শিশু সদন’ ও মমতাজ আজিজ বৃদ্ধাশ্রমটি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার সরেরহাট গ্রামে অবস্থিত। জেলা শহর থেকে ৪৮ কিলোমিটার পূর্বে উপজেলার একেবারে শেষ মাথায় পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে গ্রামটির অবস্থান। ১৯৮৪ সালে ১২শতাংশ জমি কিনে সেখানে প্রতিষ্ঠিত করা হয় এতিম খানা। যার প্রতিষ্ঠাতা হলেন পল্লী চিকিৎসক সামসুদ্দিন সরকার। এলাকার লোকজন সমেস ডাক্তার বলেই সন্বোধন করেন। সাদা মনের মানুষ হিসেবে একুশে পদক পেয়েছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সমেস ডাক্তার।
প্রতিষ্ঠকালিন সময়ে এতিম শিশুর সংখ্যা ছিল ৫৬ জন। বর্তমানে ১৬৬ জন এতিম শিশুর মধ্যে ১১৫ জন ছেলে ও ৫১ জন মেয়ে। বর্তমানে জমির পরিমান ৫২ শতাংশ।
অপরদিকে ফকরুল কবির রিপনের আর্থিক সহযোগিতায় এতিম শিশুদের পাশাপাশি বয়স্কদের কল্যাণে সেখানে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘বৃদ্ধাশ্রম’। যার প্রতিষ্ঠাতা হলেন মেহেরুন্নেছা। সেখানে ঠাঁই পেয়েছে ৬০ জন বৃদ্ধ। তারা সকলেই ডা. সামসুদ্দিন কে বাবা ও স্ত্রী মেহেরুন্নেসাকে আম্মা বলে ডাকেন। এতিম ও বৃদ্ধের বাবা মা এই দম্পতির ওরশজাত দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। অসীম সৌন্দর্য আর ভালোবাসার মধ্যে তাদের বসবাস।
সমেস ডাক্তার জানান, সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয়,জনগনের সাহায্য সহযোগিতা ও সংস্থার নিজস্বসহ বার্ষিক আয় সাড়ে ৭ লাখ টাকার উর্ধ্বে নয়। প্রতি মাসে খরচ হয় দেড় লাখ টাকা। বৎসরে যার পরিমান ১৮ লক্ষ টাকা। সরকারি ও জনগনের দেওয়া অনুদান ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম। শত দুর্যোগের মধ্যেও এতিম খানার কার্যক্রম একদিনের জন্যও বন্ধ হতে দেননি। তবে শীতের মধ্যে বৃদ্ধ ও এতিম শিশুদের নিয়ে বেকায়দায় রয়েছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে শীতের তীব্রতায় কর্মহীন হয়ে পড়ছেন শ্রমজীবী মানুষ। শীতের কারণে অলস বসে আছেন শ্রমিকরা। মোজাহার হোসেন মিহলা ডিগ্রী কলেজে গিয়ে দেখা যায়, আগুন জ্বেলে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন সেখানকার নির্মাণ শ্রমিকরা। তাদের মধ্যে কয়েকজন জানালেন,শীতের কারণে একরকম বসেই দিন পার করছেন তারা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শরিফ মোহাম্মদ রুবেল জানান, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় মোট ৪ হাজার ১৪০টি সরকারি অনুদান শীত বস্ত্র কম্বল এসেছে। সেগুলো প্রত্যেক ইউনিয়ন ও পৌরসভার মধ্যে ৪৬০টি করে গত ২ডিসেম্বর থেকে বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহি অফিসার শাহিন রেজা বলেন, শীতের কারণে কেউ কষ্টে থাকবে না। ##
No comments