মধু চাষে স্বাবলম্বী চারঘাটের ‘মধু আলীম’
আব্দুল মতিন, চারঘাট:
বাণিজ্যিকভাবে মধুর খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন খামারি আব্দুল আলীম। রাজশাহী চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের বালাদিয়াড় গ্রামের রুপচান আলীর ছেলে আব্দুল আলীমকে এখন সবাই ‘মধু আলীম` নামেই ডাকেন।
কারিগরি প্রশিক্ষণ ছাড়া একজন মধু চাষীর পরামর্শ নিয়ে ২০০৭ সালে মাত্র ৪টি মধুর বাক্স নিয়ে শুরু হয় মধু আলীমের পথচলা। এখন তার খামারে দেড় শতাধিক মধুর বাক্স রয়েছে, যেগুলোর প্রতিটির মূল্য ৭/৮ হাজার টাকা। বছরে ৫/৬ টন করে মধু উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর পাশাপাশি প্রাণ কোম্পানিসহ বিভিন্ন কোম্পানির কাছে মধু সরবারহ করেন তিনি।
সরেজমিনে গেলে বালাদিয়াড় খামারে কর্মরত আলীম বলেন, ‘শখের বসেই ২০০৭ সালে ২ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে মাত্র ৪টি মধুর বাক্স কিনে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ শুরু করি। পরে চাকরির আশা না করে মধুর বাণিজ্যিক চাষ করে আসছি’। ‘বর্তমানে আমার মধু খামারে ৫ জন সহযোগী সারা বছরই মধু উৎপাদন করেন। ২০১৫-১৬ বছরে ২ টন ও ২০১৬-২০১৭ বছরে ৩ টন মধু পেয়েছি।এ বছরও তারও দ্বিগুণ পরিমাণ পাওয়ার আশা করছি’।
তিনি আরও বলেন, ‘কুষ্টিয়ার মিরপুর ও সদরের বিত্তিপাড়া, নাটোরের গুরুদাসপুর ও চলনবিল, শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন স্থানের খামারের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করি। নভেম্বর থেকে কুষ্টিয়ার মিরপুর ও বিত্তিপাড়া এবং নাটোরের চলনবিলের সরিষা ফুলের মধু, এরপর কালজিরা ফুলের মধু এবং সবশেষে শরীয়তপুরের কালজিরার মধু ও নাটোরের গুরুদাসপুরের লিচু ফুলের মধু সংগ্রহ করি’।
আলীম বলেন, ‘গত বছর খামার থেকে এবং বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও কোম্পানির কাছে ৩০০ টাকা কেজি দরে মধু বিক্রি করেছি। বেশিরভাগ কোম্পানিই স্বল্পমূল্যে মধু কিনে নিয়ে তাতে কেমিক্যাল মিশিয়ে চড়া দামে বিক্রি করে। গাছি মধু সংগ্রহকারীরা মৌচাকে চাপ দিয়ে সংগ্রহ করেন। এতে মধুর গুণাগুণ ৪০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। আর আমার খামারে যন্ত্রের সাহায্যে বাতাস দিয়ে সংগ্রহ করি। এতে আমাদের মধুর গুণাগুণ অক্ষুণ্ন থাকে’।
সরকারিভাবে বিক্রির ব্যবস্থা করা হলে আমরা মৌ খামারিরা আরো বেশি লাভবান হতে পারবো’- বলেন আলীম। চারঘাটে এটাই বাণিজ্যিকভাবে প্রথম মৌ চাষ উল্লেখ করে চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কুরমান আলী বলেন, ‘মৌমাছি ফুলে বসার মধ্যদিয়ে পরাগায়ন হয়। যে মাঠে যত বেশি মৌমাছি থাকবে, সেই মাঠে তত বেশি পরাগায়ন হবে। স্বাভাবিকভাবে একবিঘা জমিতে ৪-৫ মণ সরিষা হয়। মৌমাছি বেশি হলে প্রায় ২৫ ভাগ উৎপাদন বেড়ে যায়।
সরকারি এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘শুধু সরিষার মৌসুমেই নয়, সারা বছরই মৌ চাষ করা যাবে। কারণ আমাদের দেশে সারা বছরই কোনও না কোন ফুল থাকে। ফলে সরিষা শেষে আম বাগান, লিচু বাগানেও মৌ চাষ করা যাবে। মৌ চাষে বিনিয়োগের তুলনায় মুনাফা বেশি। কেউ যদি বাণিজ্যিকভাবে মৌ চাষ করতে চান, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’
No comments