Header Ads

  • সর্বশেষ খবর

    চারঘাট উপজেলার ব্যতিক্রমী একজন প্রধান শিক্ষক!


    আব্দুল মতিন,চারঘাট:
    প্রধান শিক্ষক শামিমা সুলতানা হেসে বললেন, ‘ছাত্ররা ভয় পাবে কেন? যেকোনো সমস্যা হলে সবার আগে আমার কাছে ছুটে আসে তারা।’
    রাজশাহীর চারঘাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাঃ শামিমা সুলতানা। তিনি দুইবার পেয়েছেন উপজেলা সেরা শিক্ষকের সম্মান। এই স্কুলে তিনি প্রধান শিক্ষক হয়ে এসেছেন ২০১৬ সালর ৮ই সেপ্টেম্বর।এর মধ্যেই বদলে গেছে এই স্কুল। বদলে গেছে স্কুলের চারপাশ।
    শামিমা সুলতানা বললেন, এখানে যোগদান করে তিনি সবার আগে নিজ উদ্যোগে স্কুলের চারপাশ পরিষ্কার করিয়েছেন। যেটা আগে ছিল আশপাশের ময়লা ফেলার জায়গা, সেখানে এখন কেবল তাঁর স্কুলেরই নয়, অন্যান্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর খেলাধুলা হয়। স্কুলে তিনি শুদ্ধভাবে জাতীয় সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন।
    শামিমা সুলতানা দায়িত্ব নেওয়ার আগে এই স্কুলের শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০০ জন। এখন সেই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫০। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে কমপক্ষে ১০০ জনই সুবিধাবঞ্চিত। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এসব শিক্ষার্থীর খোঁজখবর রাখেন। শামিমা সুলতানার স্কুলে আছে মানবতার দেয়াল। সেখানে শিক্ষক আর শিক্ষার্থীরা ঘরের অপ্রয়োজনীয় যা কিছু, সব এনে রাখে। পরে যার যেটা দরকার, সেখান থেকে নেয়। এই স্কুলে আছে সততা স্টোর। এখানে তিনি নিজের ব্যক্তিগত টাকা দিয়ে খাতা, কলম, পেনসিল, রাবার আর পেনসিল কাটার কিনে রেখেছেন। আর রেখেছেন একটা মাটির ব্যাংক। স্টোর থেকে যার যা লাগে, ব্যাংকে ৫টাকা রেখে নিয়ে নেয়।

    শামিমা সুলতানা জানালেন, স্কুলে আছে বই কর্নার আর বঙ্গবন্ধু কর্নার। স্কুলে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর দিয়ে পাঠদান করানো হয়। শিক্ষকদের জন্য রয়েছে বায়োমেট্রিক হাজিরার ব্যবস্থা। আছে অভিযোগ বক্স। অন্যান্য শিক্ষক আর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গাছ লাগিয়েছেন তিনি। সপ্তাহের সেরা শিক্ষার্থীকে তিনি ডায়েরি আর কলম উপহার দেন। পুরস্কারের অংশ হিসেবে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে ছবি তোলেন।

    তিনি বললেন, ‘ঈদের পর সবাইকে একদিন ঈদের জামা পরে আসতে বলেছিলাম। সেদিন আমি নিজে সবাইকে সেমাই আর মিষ্টি খাইয়েছি।’ চীন প্রবাসী চারঘাটের কৃতি সন্তান শামসুল হক স্কুলটিকে সহায়তায় দিয়েছেন ১লাখ টাকা অনুদান। সেই টাকা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সুবিশাল মঞ্চ। স্কুল ড্রেসের অভাবে যেসব শিক্ষার্থী ক্লাসে আসত না, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের সাতজনকে স্কুল ড্রেস কিনে দিয়েছেন তিনি। ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন ক্লাসে।তার প্রভাব পড়েছে রেজাল্টেও।
    গত তিন বছর পিএসসি তে শতভাগ পাশ করেছে বিদ্যালয়টিতে। ২০১৯ এ ১৭জন পেয়েছে এ প্লাস। আর ২০১৮ তে চারঘাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উপজেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় নির্বাচিত হয়েছে। উপজেলা প্রতিটি বিশেষ দিবসে অংশগ্রহন করে পেয়েছে অসংখ্য পুরস্কার।
    লেখাপড়ার ইচ্ছা থাকার পরও বাবার সঙ্গে চা ব্যবসায় ফিরে গিয়েছিল পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া জহুরা। শামিমা সুলতানা তাঁকে স্কুলে ফিরিয়ে এনেছিলেন। জহুরা এবার পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় ৪.৫ পেয়েছে। জহুরাকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির খরচসহ অন্যান্য সহযোগিতাও করেছেন এই প্রধান শিক্ষক।

    শামিমা সুলতানা বললেন, ‘স্কুলের শিক্ষার্থী আর আমার সন্তানেরা একই রকম। আমি যখন স্কুলে থাকি, ওদের সবাইকে আমার সন্তান মনে হয়। তাই নিজের সন্তানের জন্য যেভাবে ভাবতাম, ওদের জন্যও সেভাবেই ভাবি।’

    চারঘাট উপজেলা শিক্ষা অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) লুৎফর রহমান বলেন,শামিমা সুলতানা একজন দক্ষ শিক্ষক। তিনি দুইবার সেরা শিক্ষকের মর্যাদাও পেয়েছেন।নিজ প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রতি তিনি অনেক যত্নবান। অন্য প্রতিষ্ঠান গুলো সব সময়ই মডেল স্কুলকে অনুসরণ করে। আর তিনি চারঘাট মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কাজেই তিনি আরো সাফল্য পাবেন এবং আরো দক্ষ হয়ে উঠবেন, সে কামনা করি।

    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728