Header Ads

  • সর্বশেষ খবর

    নিপাহ ভাইরাস কী জানেন না চারঘাটের গাছিরা, নেই প্রচারণা!


    আব্দুল মতিন,চারঘাট:
    চলছে শীতের মৌসুম। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন চারঘাটের গাছিরা। গ্রামাঞ্চলে খেজুর গাছের কাঁচা রস খাওয়ার প্রবণতাও কম নয়। তবে এই খেজুরের কাঁচা রসেই ছড়িয়ে থাকে নিপাহ নামক ভাইরাস। যে ভাইরাসে আক্রান্ত হলে অধিকাংশ মানুষেরই মৃত্যু ঘটে।

    চারঘাট উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে নিপাহ ভাইরাসের বিষয়ে তেমন কোনো দৃশ্যমান সতর্কতামূলক প্রচার-প্রচারণা নেই। ভয়াবহ এ ভাইরাসের খবর জানেন না গাছিরা। জানা নেই সাধারণ মানুষদেরও।

    নিপাহ ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করা স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. মিরজাদী সেবরিনা ফ্লোরা গত বছরের ১৮ নভেম্বর নিপাহ ভাইরাস নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

    সেখানে উল্লেখ করা হয়, ২০০১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩১৩ জন মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ২১৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরে আক্রান্ত হয়েছেন আটজন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন পাঁচজন।

    উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের কানজগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা গাছি আব্দুল হামেদ (৩৮)। ১৫ বছর ধরে প্রতি বছরই শীত মৌসুমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। রস বিক্রি ও রস থেকে গুড় তৈরি করে বিক্রি করেন হাট-বাজারে। শীত মৌসুমে ৪৫-৫০ হাজার টাকা রোজগার করেন তিনি। তবে তিনি জানেন না, খেজুর রসের ভয়াবহ নিপাহ ভাইরাসের খবর।

    গাছি আব্দুল হামেদ বলেন, শীত মৌসুমে খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করেই শীত মৌসুমে রোজগার করি। উপার্জনের সেই অর্থ দিয়েই চলে সংসার। এ বছর আমি ৪০-৪৫টা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছি। খেজুর গাছে বিভিন্ন পাখিসহ রাতে বাদুড় মুখ দেয়। সেই রসই আমি বিক্রি করি। তবে নিপাহ ভাইরাস বলে কিছু আছে সেটি আমার জানা নেই।

    একই গ্রামের ওই গাছির প্রতিবেশী আবু হোসেন বলেন, খেজুরের কাঁচা রস আমরা প্রতিনিয়তই খাই। শুধু আমি নই এলাকার বহু মানুষ কাঁচা রস খেয়ে থাকেন। বিকেলে বা সন্ধ্যায় হাট-বাজারে গাছিরা কাঁচা রস বিক্রি করেন। অনেকেই কাঁচা রস খেতে পছন্দ করেন।

    কাঁচা রসে নিপাহ ভাইরাস ছড়ায়, আক্রান্ত হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে- এ বিষয়টি জানেন কি না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খেজুরের রস খাওয়ার ব্যাপারে এখন থেকে সতর্ক থাকব।

    সদর ইউনিয়নের রাওথা গ্রামের গাছি শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ৩০টা খেজুর গাছ থেকে এ বছর রস সংগ্রহ করছি। সকাল থেকে খেজুর গাছে ভাড় (মাটির মাত্র) ঝুলাতে ঝুলাতে দুপুর হয়ে যায়।কাঁচা রসও বিক্রি করি অনেক সময়। প্রতি ভাড় খেজুরের কাঁচা রস ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া রস জ্বালিয়ে উৎপাদিত গুড় বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৭০-৯০ টাকায়। কাঁচা রসে নিপাহ ভাইরাস ছড়ায় এ ঘটনা আমাকে কেউ বলেনি।

    ওই এলাকার মীরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী রবিউল বলেন, গ্রামের সাধারণ মানুষ প্রতিদিনই কাঁচা খেজুরের রস খায়। নিপাহ ভাইরাসের সতর্কতামূলক স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো প্রচারণা আজ পর্যন্ত চোখে পড়েনি।

    জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর অফিস জানায়, রাজশাহীতে খেজুর গাছের সংখ্যা ৭ লাখ ৮০ হাজার। এসব গাছ থেকে প্রতি শীত মৌসুমে রস সংগ্রহ করা হয়।এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গাছ আছে চারঘাট উপজেলায়।চারঘাটে গাছের সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৯৬ হাজার।কোনো কৃষক খেজুর গাছের বাড়তি চাষ করেন না। পতিত জমিতে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এসব গাছ।

    নিপাহ ভাইরাসের ব্যাপারে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শেখ মোহাম্মদ আলী রাশেদ বলেন, এটি একটি সংক্রামক রোগ। একবার আক্রান্ত হলে পরিত্রাণ পাওয়া কঠিন, মৃত্যু হতে পারে। শীতকালে গ্রামে এ ভাইরাসটি বেশি ছড়ায়। মূলত খেজুরের কাঁচা রস থেকে এ ভাইরাসটি বেশি ছড়িয়ে থাকে। তবে ফুটানো খেজুরের রস খাওয়া নিরাপদ।

    তিনি বলেন, উপজেলাব্যাপী মাইকিং করে নিপাহ ভাইরাসের ব্যাপারে সতর্কতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। মাঠপর্যায়ের উঠান বৈঠকেও এ ব্যাপারে জনসাধারণকে সতর্ক করা হয়েছে।##

    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728