চারঘাটে ঝাল মুড়ি বিক্রি করে শাহাফুল ইসলাম এখন স্বাবলম্বী!
আব্দুল মতিন, চারঘাট : শাহাফুল ইসলাম (৩৫)। আত্মপ্রত্যয়ী এক যুবক । চানাচুর ভাজা, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, সরিষার তেল ও বুট দিয়ে অত্যন্ত মুখরোচকভাবে মুড়ি মাখিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করছেন। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি মুড়ি বিক্রি করে তিনি আজ স্বাবলম্বী। চারঘাট উপজেলার ভায়ালক্ষীপুর ইউনিয়নের ডাকরা পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল কাশেম এর ছেলে সাহাফুল ইসলাম দীর্ঘ ৮ বছর ধরে এ ব্যবসা করে আসছেন। চারঘাট উপজেলা ডাকরা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এর পেছনে তার এ মুড়ি মাখাইয়ের দোকান। স্ত্রী আফরোজা বেগম, মেয়ে শায়লা আক্তার কে নিয়ে তার সংসার। দারিদ্র্যতার কারণে নিজে লেখাপড়া শিখতে না পারলেও মেয়েকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। মেয়ে ডাকরা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এ নবম শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে। সম্প্রতি চারঘাট উপজেলা ডাকরা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এর পেছনে তার এ মুড়ি মাখাইয়ের দোকান । তার দোকানে গিয়ে দেখা গেছে ক্রেতারা তার মাখা মুড়ি খেতে ব্যস্ত শাহাফুল ইসলাম জানালেন, বাবার অভাবী সংসার। কোনভাবে বড় হয়েছি। প্রথমে ১০৫২ টাকা নিয়ে এ ব্যবসা শুরু করেছি। এ ব্যবসা করে ৪ সদস্যের পরিবারের যাবতীয় খরচ এখান থেকে বহন করছি। তিনি বলেন, ব্যবসায় প্রতিদিন দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। এতে ৩শ' থেকে সাড়ে ৩শ' টাকা আয় হয়। এই উপার্জিত অর্থ দিয়ে মেয়ের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চলে।
এই বিষয়ে শাহাফুল ইসলাম আরো বলেন,ডাকরা হাই স্কুল, ডাকরা ডিগ্রী কলেজ, ডাক্তার গার্লস স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ও স্কুলের মাস্টার পর্যন্ত আমার হাতে মাখাই মুড়ি খেয়ে প্রশংসা করেছেন।
আমি যতদিন আছি ততদিন সকলের কাছ থেকে এই ভালোবাসা ও আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়।
ডাকরা ডিগ্রী কলেজের প্রাইভেট শিক্ষক সুমন আহমেদ জানান, শাহাফুল এর হাতের মাখা মুড়ির কোন তুলনাই করা যায়না । যে একবার খাবে তাকে পুনরায় আসতে হবে তার দোকানে। শাহাফুল ইসলাম দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে চলেছেন সামনের দিকে।
ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনগণ শাহাফুল ইসলাম এর ঝালমুড়ি বিক্রি বিষয়ে জানালেন , শাহাফুল মামা একজন রসিক মানুষ। সকলের প্রতি ভালোবাসা সহ তার ঝালমুড়ির এক অসাধারন গুন রয়েছে। মামার হাতের ঝালমুড়ি না খেলে যেন ছাত্র ছাত্রীদের দিন কাটে না।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো দোকান খোলা থেকেই যেন সিরিয়াল দেয়া শুরু হয় আর মাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত সিরিয়াল থাকে। অনেক সময় দেখা যায় মাল শেষ হয়ে গেছে অথচ দোকানের সামনে অপেক্ষাদের সিরিয়াল রয়ে গেছে। তাদেরকে হাসিমুখে বলে ভাই আপনারা কাল আসেন।’
শাহাফুল ইসলাম মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই তার একমাত্র স্বপ্ন। বর্তমানে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে সুখে শান্তিতে জীবনযাপন করছেন তিনি।
No comments