চারঘাটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে তামাকপণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক, চারঘাট:
তরুণ প্রজন্মকে তামাকের ভয়াল ছোবল থেকে বাঁচাতে উদ্যোগ নিয়েছেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. হামিদুল হক। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতে ধূমপানে আকৃষ্ট হয়ে অকালেই ঝরে না যায় সেজন্য তিনি রাজশাহী জেলার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে দোকানগুলোতে তামাকপণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন।সকাল ১১.৩০ মিনিটের দিকে তিনি উপজেলার শলুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শলুয়া উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন।পরিদর্শনকালে তিনি বিদ্যালয়ের আশে পাশের দোকানে তামাক পণ্য বিরোধী প্রচারনা চালান এবং শিক্ষার্থীদের কাছে তামাক পণ্য বিক্রি করতে দোকানীদের নিষেধ করেন।
জেলা প্রশাসকের এমন প্রচারনাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। এদিকে তামাকপণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে ও প্রতিরোধে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংগঠন এসিডির এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে,রাজশাহী জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করে তামাকের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো অবৈধ ব্যবসায় মেতে উঠেছে।
বিশেষ করে স্কুল-কলেজপড়ুয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ধূমপানে আকৃষ্ট করতে কোম্পানিগুলো নানা অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। অপকৌশলগুলোর মধ্যে তামাকপণ্যের প্রতি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে চটকদার তামাকের অবৈধ বিজ্ঞাপন, পুরস্কার-প্রণোদনা, শিশুখাদ্যের পাশে চোখ জুড়ানো তামাকপণ্যের অবৈধ ডিসপ্লে অন্যতম। শিক্ষার্থীদের ধূমপানে আকৃষ্ট করার এমন অপকৌশলের কাছে হার মেনে গিয়ে রাজশাহীর অন্য উপজেলার মত চারঘাটের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী অকালেই ঝরে পড়ছে। প্রথমে ধূমপান দিয়ে শুরু করে মাদকের সর্বনাশা নেশায় আকৃষ্ট হয়ে অনেক কোমলমতি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলার সরদহ বাজার ও চারঘাট বাজার কেন্দ্রীক শিক্ষার্থীরা এতে বেশি জড়িয়ে পড়ছে। রাজশাহীর উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্টের (এসিডি) তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের অ্যাডভোকেসি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম শামীম বলেন, ‘বতর্মানে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশই তরুণ ও যুবক শ্রেণি। আর এজন্যই স্কুল-কলেজপড়ুয়া কোমলমতি মেধাবী তরুণ ও যুবক শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তামাকের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর টার্গেটে পরিণত হয়েছে।
তাদের অপকৌশলগুলোর অন্যতম হলো-এই ৪৯ শতাংশ তরুণ-যুবক শ্রেণিকে যদি তামাকের ভয়াল ছোবলে আকৃষ্ট করা যায় তাহলে তাদের ব্যবসা শতভাগ সফল। কেননা, যে একবার ধূমপানে আকৃষ্ট হবে তাকে ধূমপান থেকে বিরত রাখা খুবই কষ্টকর। আর এজন্যই ৪৯ শতাংশ তরুণ-যুবক শ্রেণি তামাক কোম্পানিগুলোর টার্গেট।
এসিডির চারঘাট উপজেলা সোসাল সাপোর্ট কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, এসিডি একটি জরিপ পরিচালানা করে। জরিপে দেখা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১শ মিটারের মধ্যে অবস্থিত দোকানগুলোর ৭৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ দোকানে তামাকপণ্য বিক্রি করা হয়। এই দোকানগুলোর ৮২ শতাংশ দোকানে তামাক কোম্পানিগুলোর অবৈধ বিজ্ঞাপন, পুরস্কার-প্রণোদন প্রদর্শিত হচ্ছে। কাজেই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের তামাকের ভয়াল ছোবল থেকে বাঁচাতে জেলা প্রশাসন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের দোকানগুলোতে তামাকপণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করার মহতি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
এ ব্যাপারে চারঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, তামাক হলো মাদকের ভয়াবহ নেশায় আকৃষ্ট হওয়ার প্রথম ধাপ। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের দোকানগুলোতে তামাকপণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মহোদয়।আমরা ইতোমধ্যেই প্রাথমিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের দোকানিদের নির্দেশ দিয়েছি, আপনারা বিভিন্ন ধরনের খাবার বিক্রি করেন, তাতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তামাকজাতপণ্য বিক্রি করতে পারবেন না। এই নির্দেশনা না মানলে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তামাকপণ্য জব্দের একটা উদ্যোগ নিয়েছি।
No comments