পুঠিয়ায় সুদ ব্যবসায়ীদের ফাঁদে জিম্মি শতশত পরিবার !
পুঠিয়া প্রতিনিধি:রাজশাহীর পুঠিয়ায় চিহ্নিত কয়েকটি স্থানে প্রকাশ্যে চলছে সুদের রমরমা ব্যবসা। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারী না থাকায় সুদ ব্যবসায়ীদের বেড়াজালে জিম্মি হয়ে পড়েছেন শতশত সাধারণ মানুষ।
অভিযোগ উঠেছে, আইনী জটিলতা এড়াতে সুদ ব্যবসায়ীরা স্থানীয় প্রভাবশালী ও থানা পুলিশের কিছু অসাধু লোকজনের সাথে সখ্যতা রাখছেন। যার কারণে সময়মত দেনা পরিশোধ করতে না পেরে ভূক্তভোগিরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অনেকেই ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তথ্য মতে জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় দু’শতাধিক শীর্ষ সুদ ব্যবসায়ী রয়েছে। এছাড়া মাঝারি সুদ ব্যবসায়ী আছে আরো ৫ শতাধিক। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সুদের টাকা লেনদেন হয় ধোপাপাড়া বাজারে। পরের স্থান ঝলমলিয়া হাট, মোল্লাপাড়া হাট ও বানেশ্বরহাটের নাম বেশী শোনা যায়।
সুদ ব্যবসায়ীরা এলাকার সাধারণ খেটে খাওয়া দিনমুজুর, প্রান্তিক কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের টার্গেট করে। কেউ টাকা নিতে চাইলে জমির দলিল জমা রেখে সাদা স্ট্যাম্পে একটি চুক্তিপত্র করে। এরপর তারা স্ট্যাম্পে একাধিক স্বাক্ষর করিয়ে ইচ্ছেমত সুদের পরিমাণ লিখে ভূক্তভোগিদের জিম্মি করে রাখে।
বর্তমানে করোনার প্রভাব দেখা দেয়ায় বিভিন্ন পেশার লোকজন বেকার হয়ে পড়েছেন। সে সুযোগে সুদ ব্যবসায়ীরা মাসে প্রতি হাজারে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা হারে সুদ আদায় করছে।
সাতবাড়িয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফারুক হোসেন বলেন, সুদ ব্যবসায়ীদের ফাঁদে শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন এলাকার অনেক মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছেন। তারা সাধারণত টার্গেট করে দিনমুজুর, কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।
অনেকেই সময়মত টাকা দিতে না পারায় সুদ ব্যবসায়িদের অত্যচারে রাতারাতি গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। আবার সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে গত কয়েক বছরে ৫ জন আত্মহত্যাও করেছেন। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রভাবের কারণে অনেকই বেকার হয়ে পড়েছেন। আর সেই সুযোগটা বেশী কাজে লাগাচ্ছে সুদ ব্যবসায়ীরা।
জিউপাড়া ইউনিয়নের একজন ইউপি সদস্য বলেন, উপজেলার মধ্যে সুদ ব্যবসার রাজধানী হচ্ছে ধোপাপাড়া বাজার। এখানে পুলিশ-প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ৪০ থেকে ৪৫ জন শীর্ষ সুদখোর রীতিমত অফিস খুলে প্রকাশ্যে তাদের ব্যবসা করছে। প্রতিটি সুদ ব্যবসায়ীদের টাকা লেনদেনের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা বাহিনী। কেউ বিপদে পড়ে তাদের নিকট থেকে একবার টাকা নিলে রাতারাতি তার সুদ কয়েকগুন বেড়ে যায়।
এর ফলে ভূক্তভোগি ওই টাকা পরিশোধ করতে জমিজমা বিক্রি করে পথে বসে যায়। আবার অনেকে সময়মত টাকা দিতে না পারলে তাদের বাহিনীর লোকজন ভূক্তভোগিকে ধরে এনে গোপন ঘরে নির্যাতন চালায়।
সুদ ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বে রয়েছে একজন যুবলীগ নেতা। ওই নেতা থানা পুলিশসহ সকলকে ম্যানেজ করে চলে। এর পরের স্থান ঝলমলিয়া হাট। সেখানে কানাইপাড়া ও জিউপাড়া গ্রামের এক ডজন সুদ ব্যবসায়ী অফিস খুলে বসেছে।
তাদের ক্ষমতার কাছে পুরো হাট জিম্মি হয়ে রয়েছে। হাট এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালীদের পাশাপাশি একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ীও প্রায় কোটি টাকা সুদের কারবার করছে।
এ ব্যাপারে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল ইসলাম বলেন, সুদ ব্যবসায়ীদের সাথে থানা পুলিশের কোনো সমঝোতা নেই। তবে সুদ ব্যবসায়ীদের দৌরাত্মের বিষয়টি একজন ইউপি চেয়ারম্যান আমাদের লিখিত ভাবে অবহিত করেছেন। বিষয়টি বর্তমানে তদন্তাধিন আছে।
এছাড়া উপজেলার কোথায় কারা সুদ ব্যবসার সাথে জড়িত সেটার একটা তালিকা আমরা তৈরি করছি। অচিরেই ওই সুদ ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
No comments