Header Ads

  • সর্বশেষ খবর

    কোভিড-১৯: বড় ঘাটতি নিয়ে বাজেট সাজাতে হিমশিম


    রাজশাহীর দর্পণ নিউজ ডেস্ক:
    ঢাকার কারওয়ান বাজারে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে খুচরা বিক্রি। বুধবার দুপুরে ক্রেতা কম থাকায় দোকানের ভেতর ঘুমিয়ে সময় পার করছেন এক টমেটো বিক্রেতা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি
    নতুন অর্থবছর শুরু হতে আর দুই মাসও বাকি নেই। জুন মাসেই সরকারকে বাজেট ঘোষণা করতে হবে। কিন্তু কীভাবে!

    কর বাবদে সোয়া তিন লাখ কোটি টাকা আদায়ের বিশাল স্বপ্ন নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছর শুরু করেছিল সরকার। মহামারীর ধাক্কায় অর্থবছর শেষে সেই লক্ষ্য পূরণে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা।

    বিশাল এই ঘাটতি নিয়ে নতুন বাজেট তৈরি করতে গিয়ে মাথায় হাত পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আর অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের।

    বাংলাদেশ এখনও মহামারীর মধ্যে। সামনের সবকিছুই অনিশ্চিত। এত অনিশ্চয়তার মধ্যে আর কখনও তাদের বাজেট পরিকল্পনা সাজাতে হয়নি।

    পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম বলেন, “কোভিড-১৯ আতঙ্কের মধ্যে কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভালো করে বৈঠকও করা যাচ্ছে না। সব করতে হচ্ছে ফোনে-মেইলে। খোলামেলা আলোচনা, পর্যালোচনা-বিশ্লেষণের সুযোগ কই? কিন্তু কিছু করার তো নেই। বাজেট একটা করতেই হবে।”

    আসছে ১১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের সেই ‘কঠিন’ বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
    পরিস্থিতি কতটা খারাপ
    গতবছর জুনে মুস্তফা কামাল যখন জীবনের প্রথম বাজেটটি দেন, তখন তিনি ডেঙ্গু জ্বরে কাবু। বাজেট প্রস্তাব পেশ শুরু করলেও বেশিদূর এগোতে পারেননি। তার হয়ে পরে সেই বাজেট প্রস্তাব পড়ে শোনান খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    ২০১৯-২০ অর্থবছরে সোয়া ৫ লাখ কোটি টাকার যে বাজেট মুস্তফা কামাল দিয়েছিলেন, তাতে এনবিআরকে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার কর আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল। করের ওই পরিমাণ মোট বাজেটের ৬২ শতাংশের বেশি।

    কিন্তু কোভিড-১৯ এর ধাক্কায় আদায় পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আয়কর, মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট, আমদানি শুল্ক- কোন খাত থেকেই কর আসছে না।

    অর্থবছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) রাজস্ব আদায়ের তথ্য এনবিআর ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, এই নয় মাসে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার কর আদায় হয়েছে, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ৫৬ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।

    এই সময়ে শুল্ক আদায়ে লক্ষ্যের চেয়ে ২০ হাজার ২৬০ কোটি টাকা পিছিয়ে আছে এনবিআর। আয়করে ঘাটতি ১৮ হাজার ৪০ কোটি টাকা, ভ্যাটে ১৭ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা।

    গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জুলাই-মার্চ সময়ে মোট ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছিল।

    এনবিআরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত পাঁচ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে গড়ে ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু এবার যা অবস্থা, তাতে ১/২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে কিনা-তা নিয়েই সংশয়ে আছেন অর্থনীতিবিদরা।

    রাজস্ব আদায়ে করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে মার্চ মাস থেকে। এ মাসে গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ কম কর আদায় হয়েছে।

    মার্চ মাসে লক্ষ্যের চেয়ে কর আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ১১ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে আয়করে ঘাটতি ৫ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। আর ভ্যাট ও শুল্ক খাতে ঘাটতি যথাক্রমে ৩ হাজার ৭৫১ কোটি ও ২ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা।

    তবে চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।

    এপ্রিল মাসের রাজস্ব আদায়ের পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখনও এনবিআরের কাছে আসেনি। তবে কর কর্মকর্তারা বলছেন, এপ্রিল মাসে রাজস্ব আদায়ের পরমাণ গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ কম হতে পারে।
    শুধু ভাইরাস নয়?
    সব তথ্য বিশ্লেষণ করে অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি গবেষণা করে দেখেছি, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার মত রাজস্ব আদায় হতে পারে। এ হিসাবে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকবে।”

    লকডাউনে এখন কাজ-কর্ম বন্ধ। তাই অর্থবছরের শেষ প্রান্তিক এপ্রিল, মে ও জুন মাসে রাজস্ব আদায় একেবারে তলানীতে নেমে আসবে বলে তার ধারণা।

    “আমার হিসাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে ১/২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। আবার নাও হতে পারে।”

    আহসান মনসুর বলেন, “এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। শুধু কোভিড-১৯ এর কারণে যে রাজস্ব আদায় কম হবে তা নয়। অর্থবছরের শুরু থেকেই অর্থনীতিতে এক ধরনের মন্দা চলছে। একমাত্র রেমিটেন্স ছাড়া সব সূচকই কিন্তু খারাপ ছিল। তার প্রভাব রাজস্ব আদায়েও পড়ছিল।
    আমার হিসাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে কোভিড-১৯ এর কারণে রাজস্ব আদায়ে যে ঘাটতি হবে তার অংক ২০ হাজার কোটি টাকার মত। বাকি ঘাটতি অর্থনীতির মন্থর গতি এবং অতি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যের কারণে।”

    চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা ‘কোনোভাবেই ঠিক ছিল না’ বলে মনে করেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর।
    ছয় মাসের বাজেট?
    মহামারীর এই কঠিন সময়ে যখন ঠিকঠাক পরিকল্পনা সাজাতে সমস্যা হচ্ছে, তখন ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ের জন্য বাজেট না দিয়ে ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য একটি ‘কোভিড-১৯ বাজেট’ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর।

    “দিন যত যাচ্ছে পরিস্থিতি ততোই খারাপ হচ্ছে। লকডাউন বাড়ছে; সবকিছু বন্ধ। কবে স্বাভাবিক হবে তারও কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। সে কারণে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মানুষের জীবন, জীবিকা ও পুনর্বাসনের লক্ষ্য ধরে ছয় মাসের একটা বাজেট করা উচিত বলে আমি মনে করি।”

    নতুন বাজেটের ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলতে চান না এনবিআরের কর্মকর্তারা।

    তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আয়কর বিভাগের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “সবকিছু যখন বন্ধ, ট্যাক্স আসবে কোথা থেকে। জোর করে তো আর ট্যাক্স আদায় করা যাবে না। নতুন বাজেট তৈরি করতে গিয়ে কোনো কুলকিনারা পাচ্ছি না আমরা। কোন খাতে কতো প্রবৃদ্ধি ধরব বুঝতে পারছি না।”

    গতানুগতিক প্রথায় চলতি বাজেটের রাজস্ব আদায়ের সম্ভাব্য হিসাব ধরে তার সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট প্রবৃদ্ধি রেখে নতুন কর আদায়ের ফর্দ কষা হয়। কিন্তু এবার যে কর আদায় হবে তার সঙ্গে বড় প্রবৃদ্ধি ধরে নতুন লক্ষ্য ধরা হলেও চলতি বাজেটের লক্ষ্যের চেয়ে কম হবে।

    এ প্রসঙ্গে আহসান মনসুর বলেন, “এবার পুরো অর্থবছরের জন্য বাজেট দেওয়া হলেও সেই বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য তিন লাখ কোটি টাকার উপরে যাওয়া উচিৎ হবে না।”
    প্রণোদনার ‘চ্যালেঞ্জ’
    পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাজস্ব আদায়ে যে বড় ঘাটতি থাকবে, তাতে তারও সন্দেহ নেই।

    “একদিকে মানুষের জীবন বাঁচানো; অন্যদিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া- সত্যিই কঠিন মুহূর্ত পার করছি আমরা। শুধু আমাদের নয়; পৃথিবীর সব দেশেরই এ অবস্থা।”

    তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে প্রায় লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এসব প্যাকেজ বাস্তবায়নই এখন মূল চ্যালেঞ্জ। আর এ সব প্যাকেজের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই নতুন বাজেট বানাতে হবে।”

    শামসুল আলম বলেন, গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে নতুন বাজেট দেওয়ার ভাবনা ছিল তাদের।

    “কিন্তু সেটা আর এখন হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত হয়ত আড়াই-তিন শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে বাজেট দেওয়া হবে।”

    সেক্ষেত্রে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৫ লাখ ৫৫ হাজার কোটি থেকে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দেন শামসুল আলম।

    “এবার রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতির কারণে নতুন বাজেটেও রাজস্বের লক্ষ্য কম ধরতে হবে। সে কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতিও কিন্তু বেড়ে যাবে। এ যাবৎ আমরা ৫ শতাংশের নিচে ঘাটতি ধরেই বাজেট দিয়েছি। এবার হয়ত সেটা ৭ শতাংশে ঠেকবে।”

    ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সার্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় বাজেট সামনে রেখে আগামী ১০ মে কিছু প্রস্তাব দেবেন তারা।

    “তাতে কোন খাতে কি ধরনের ছাড় দেওয়া দরকার, এখন কর আদায় বন্ধ রেখে বকেয়া কর পরে কীভাবে ধাপে ধাপে আদায় করলে ভালো হবে, যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের কর মওকুফ করা যায় কিনা- এসব বিষয় থাকবে।##

    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728