চোখে পানি নিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে বলি ‘ভালোবাসি বাবা’||rajshahirdorpon24
চোখে পানি নিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে বলি ‘ভালোবাসি বাবা’||rajshahirdorpon24 |
নিউজ ডেস্ক:
মাঝে মাঝে এমন একটা সময় সবার জীবনেই আসে যখন মানুষ সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। তখন কারো পরামর্শ খুব জরুরী হয়ে পড়ে । সে সময়ে পাশে দাঁড়ানোর মতো আদর্শ একজন মানুষ হলেন বাবা। স্বভাবগত গাম্ভীর্যের কারণে বাবার সাথে সবার ঘনিষ্ঠতা একটু কম থাকে। অথচ, আমাদের প্রতি ভালোবাসায় তার কোন ঘাটতি থাকে না। ‘বাবা আমি তোমাকে ভালোবাসি’ এই কথাটি কোনোদিন বলা হয়নি। বাবা সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আর মিস করি প্রতিনিয়ত। আমি একজন সৎ মানুষের সন্তান, যার পরিচয় দিতে গর্বে বুকটা ভরে যায়।
একটা সময় কতবার কল্পনা করেছি, বাবার মৃত্যু একটা দুঃস্বপ্ন মাত্র, যেকোনো সময় বাবা ফিরে আসবে। এখনো মাঝেমধ্যে স্বপ্ন দেখি, আমি আর বাবা হাঁটছি ফসলের মাঠের ভেতরের কোন এক রাস্তা দিয়ে। প্রতিটি মুহূর্তে বাবাকে মিস করি। আমি সবসময় মনে করি বাবা ছাড়া আমি একজন অসম্পূর্ণ মানুষ।
বাবা থাকলে যাকিছু হতো, যা শিখতাম, বাবার অবর্তমানে তা হয়নি আমার জীবনে। সবসময় মনে হয়, আমার মাথার উপর কোন বটবৃক্ষের ছায়া নেই। ছোটবলা থেকেই দেখেছি, বাবা সারাদিন মাঠে অনেক পরিশ্রম করে। সেজন্য বাবার সাথে কাটানো স্মৃতির সংখ্যা কম। কিন্তু বুকের গভীরে কোথাও একটা স্মৃতিসৌধ আছে যার মুখোমুখি দাঁড়ালেই বাবাকে মনে পড়ে, দেখতে পাই সেই বটবৃক্ষকে যাকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ।
অনুভবে স্পর্শ করতে পারি তার অস্তিত্ব। বাবা খুব বিপদে ফেলে গেছেন আমাকে, তিনি মাকে বলে গিয়েছিলেন তার ছেলে অনেক বড় মানুষ হবে, মানুষ আজও হতে পারিনি, তবে তোমার ইচ্ছে পূরণে প্রতিনিয়ত নিজেকে ভেঙ্গে মানুষ হওয়ার চেষ্টায়রত তোমার সন্তান বাবা।
বাবা সব দিন সব সময় আমার কাছে ছিলেন একি রকম আমার জন্য বাবা আলাদা ছিলেন না। কিন্ত আজ বিশ্ব বাবা দিবস। এদিনে তোমাকে খুব বেশী বেশী মনে পড়ছে। তোমাকে হারিয়েছি অনেকদিন হলো। প্রতিটা দিন মনে হয় এক একটা বছর। কিন্তু তোমাকে ভুলতে পরিনি একটি মুহুর্তের জন্যেও। কাউকে প্রকাশ করতে পারিনা হৃদয়ের আকুলতা। নীরবে-আড়ালে কত যে কেঁদে চলছি তা কাউকে বুঝাতে পারি না।
বাবা, মৃত্যুর কাছা-কাছি সময়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বারান্দার এক কোনে কাতরাচ্ছিলে। ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হলেও তুমি ঘুমের মধ্যে যন্ত্রনায় ছটফট করছিলে। ডাক্তাররা একটিবারও তোমাকে দেখেনি। হাসপাতালে একটি বেডও ব্যাবস্থা করতে পারিনি আমি। অসহায় আমি শুধু কেঁদে ছিলাম, কিছুই বলতে পারিনি, শুধুই বলেছিলাম আল্লাহ আমার বাবাকে মাফ করে দিন। সেই কঠিন মুহুর্তে জীবনের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু বৃষ্টি আর ছোট ভাই সজীব পাশে থেকে আমাকে সহায় দিয়েছে।
মারা যাবার ঠিক ১৫ মিনিট আগে একজন ডাক্তার দেখে বলে দিয়েছিল, তোমার বাবার অবস্থা সংকটাপন্ন। এখন আর বাঁচানো সম্ভব না। সেদিন খুব কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করেছিলাম। আল্লাহর কাছে তোমাকে ভিক্ষা চেয়েছিলাম।
আল্লাহ সম্ভবত তোমাকে খুব বেশী পছন্দ করেছিলেন, তাই তোমাকে তার কাছে নিয়ে গেলেন। আমাদেরকে এতিম করে। আর বাবা ডাকা হয়নি সেই থেকে দীর্ঘ দিন। আর হবেনা কোনদিনও। আর কেউ কোন সান্ত্বনা দেয়নি তোমার মত করে, সাহস দেয়নি তুমি যেমন দিতে, মাথায় হাত ভুলায়নি তুমি যেমন ভুলিয়েছিলে। বাবা তুমি কেন চলে গেলে? প্রকৃতির এ নিষ্ঠুরতা আমি মানতে পারছি না-বাবা।
বাবা, আজ তোমায় খুব মনে পড়ে, তোমার অভাব প্রতিটি মুহুর্ত, প্রতিটি কাজে, প্রতি অবস্থাতেই অনুভব করি অন্তর হতে।
লেখক: সাংবাদিক ও সমাজকর্মী, চারঘাট, রাজশাহী।
No comments