তানোরে ভুর্তুকির সার বিক্রিতে নৈরাজ্য ||rajshahirdorpon24
ফাইল ফটো |
তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধি :
রাজশাহীর তানোরে মনিটরিং কমিটির নিষ্ক্রিয়তায় ভর্তুকির সার বিক্রিতে চরম নৈরাজ্য চলছে। ভরা মৌসুমে এসব সার চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এক জেলা বা উপজেলার সার অন্য জেলা বা উপজেলায় চালান ও বিক্রিতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এখানে কেউ মানছে না অবাধে সার পাচার হচ্ছে। ডিলার, খুচরা কারবারি, বিসিআইসি ও কৃষি বিভাগের একশ্রেণীর কর্মকর্তা এবং আমদানিকারকরা সার পাচার চক্রে সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া সার বিক্রির সরকারি অনুমোদন ছাড়াই কালোবাজার থেকে সার কিনে তা মজুদ করছে একশ্রেণির ফড়িয়া।
উপজেলার এক সার ডিলার জানায়, সার বিতরণ নীতিমালা-২০০৯ অনুযায়ী এক জেলার জন্য বরাদ্দ সার অন্য জেলা, অঞ্চল বা উপজেলা এলাকায় চালান ও বিক্রি নিষিদ্ধ। অনুমোদিত ডিলারকে বরাদ্দ সার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তোলন করতে হয়। সার উত্তোলনের পর উপজেলা মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা সদস্য সচিব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পৃথক অথবা যৌথভাবে ডিলারের দোকান পরিদর্শন করে সার উত্তোলন ও সংরক্ষণের কাগজপত্র নিশ্চিত হবেন।
গুদাম থেকে সার উত্তোলনের পর পরিবহনের বরাদ্দপত্র, চালান ও বাফারের ছাড়পত্র, কোথায় সার যাবে, সেই ঠিকানা চালানপত্রে থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্ত্ত তানোর উপজেলায় সার বিক্রিতে এসব নিয়মের কোনো বালাই নেই। কোনো ডিলার সার উত্তোলন করতে না পারলে তার বরাদ্দ মনিটরিং কমিটির কাছে সমর্পণ করতে হয়। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, উপজেলা সার মনিটরিং কমিটি বিষয়টি জানার পরও অজ্ঞাত কারণে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।টিএসপি, ডিএপি ও এমওপির এক বস্তা ৫০ কেজির সারের সরকারি মূল্য ৭০০ টাকা হলেও কৃষক কিনছেন ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায়। টিএসপি সারের সরকারী মুল্য ১১০০ টাকা হলেও বিক্রি হচচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিলার জানান, পাশ্ববর্তী চৌবাড়িয়া, সাবাইহাট, নাচোল, নেজামপুর ও রাজবাড়ীহাট পাচার হয়ে আসা সারের বড় মোকাম হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, চৌবাড়িয়া বাজারের আতাউর রহমান, আজিজপুর মোড়ের নজরুল ইসলাম, দরগাডাঙ্গা বাজারের মোজাম্মল হক,সরনজাই বাজারের আজমত আলীসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী নওয়াপাড়াসহ বিভিন্ন মোকাম থেকে অবৈধভাবে সার কিনে এনে মজুদ ও কৃষকদের কাছে চড়া দামে সার বিক্রি করছে। উপজেলা সার মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব ও কৃষি কর্মকর্তা শামিমুল ইসলাম বলেন, এই অঞ্চলে সারের চাহিদা বেশি থাকায় কেউ কেউ বরাদ্দ ছাড়াই অবৈধভাবে ইউরিয়া, নন-ইউরিয়া সার বিভিন্ন মোকাম থেকে আনছে। কৃষকদের কাছে তারা সার বিক্রি করছেন বলে আমরা কিছু বলছি না। তবে এভাবে সার আনা ও বিক্রি করা অবৈধ বলে তিনি স্বীকার করেন।
অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ,বিসিআইসি ও বিএডিসির একশ্রেণীর ডিলার বরাদ্দ সার না তুলে নওয়াপাড়া, নগরবাড়ী, রাজশাহী, সান্তাহার, রোহনপুর বাফারে বরাদ্দপত্র বিক্রি করে দিচ্ছে।এতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মজুদদারদের কাছে এসব সার চলে যাচ্ছে। পরে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে মজুদদাররা চড়া দামে এসব সার বিক্রি করছে। ফলে বাধ্য হয়ে কৃষক কিনছেন চড়া দামে। সুত্র জানায়, স্থানীয় কৃষি বিভাগের নজরদারির অভাব ও একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর নেপথ্যে মদদে সার পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যে বৈধ ডিলাররা সার বিক্রি করতে পারছেন না।
অনুমোদন ছাড়াই যত্রতত্র সার মজুদ ও বিক্রির ফলে বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টিও হয়েছে। কোথাও কোথাও বেশি দামে সার কিনছেন কৃষক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তালন্দ বাজারের জনৈক সার ব্যবসায়ী বলেন, বিসিআইসির কিছু ডিলার বরাদ্দ অনুযায়ী সার উত্তোলন না করে চাহিদাপত্র (ডিও) বিক্রি করে দিচ্ছে। ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি নওয়াপাড়া মোকামে ও রাজশাহী বাফারে তারা বেঁচে দেন। কৃষকের চাহিদা পূরণে সেখান থেকে আমরা বেশি দামে সার কিনে আনি। নওয়াপাড়ায় ভর্তুকির সার খোলাবাজারে বিক্রি হয়। আমরা অল্প লাভে কৃষকের কাছে বা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। দোষটা আমাদের নয়। যারা ডিও বিক্রি করছে আর সিন্ডিকেট করে সার মজুদ করছে, দোষটা তাদের।
তিনি বলেন, নওয়াপাড়ায় অবৈধ সার প্রকাশ্যে কেনা-বেচা হচ্ছে।রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সার মনিটরিংয়ে কৃষি কর্মকর্তাদের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে তার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। সারের অবৈধ মজুদ ও বিক্রি সম্পর্কেও তিনি অবহিত নন। অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেয়া হবে
No comments