বাঘায় সুদখোরের দাপটে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকেই ||rajshahirdorpon24
ফাইল ফটো |
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি ঃ
যখন যার ইচ্ছে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে খুলে বসছেন সমিতি। নামমাত্র এসব সমিতি খুলে সুদের বিনিময়ে কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ অনেককেই ঋণ দিচ্ছে তারা। বিনিময়ে নেয়া হচ্ছে ফাঁকা ষ্ট্যাম্প ও চেক। অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিও টাকার প্রাচুর্য থাকায় একই কাজ করছেন। এতে প্রতিনিয়ত চড়া সুদের ফাঁদে পড়ে বিপদগামী হচ্ছেন সুবিধা নিতে আসা অসহায় মানুষ। সম্প্রতি বাঘা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সাথে এক মতবিনিময় সভায় বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।
সভায় একজন গণমাধ্যম কর্মী ও একজন শিক্ষক বলেন, বর্তমানে বাঘায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সুদের ব্যবসা। বিনা লোকসানে এই ব্যবসা করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন কিছু অসাধু প্রকৃতির মানুষ। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই নিজের খেয়াল খুশি মতো উচ্চমাত্রার লাভে সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। শুধু তাই নয়, সুদ গ্রহিতার কাছ থেকে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর ও ফাঁকা চেক নিয়ে জিম্মি করছে তাদের। অনেক ক্ষেত্রে আসল ও কিছু সুদের টাকা পরিশোধ করলেও চক্রবৃদ্ধি সুদ দিতে না পারায় ওই দুই কাগজের বলে আইনের মারপ্যাঁচে জেলে যেতে হচ্ছে অসহায় সুদ গ্রহিতাদের।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সুদ ব্যবসায়ীদের নানা তথ্য। বাউসা মাঝপাড়া গ্রামে রয়েছে ‘মাঝপাড়া উন্নয়ন সংস্থা’, আড়ানীতে রয়েছে ‘বন্ধন সমবায় সমিতি’, মনিগ্রামে রয়েছে ‘সঞ্চয় সমবায় সমিতি’, আরিপপুরে রয়েছে ‘আরিপপুর গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা’। এ রকম নামকাওয়াস্তে আরো অনেক সমিতি লক্ষ্য করা গেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
বিশেষ করে উপজেলার বাউসা, পীরগাছা, আড়ানী, মীরগঞ্জ, বাজুবাঘা, সরেরহাট, আরিফপুর ও মনিগ্রাম সহ উপজেলার প্রায় সব গ্রামেই চলছে সুদের ভয়াবহ আগ্রাসন। দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক হারে চলছে জমজমাট এ ব্যবসা। এ সব সুদখোরদের বাড়িতে রয়েছে গ্রাহকদের স্বাক্ষর করা শত শত ফাঁকা চেক ও ফাঁকা ষ্ট্যাম্প। এদের অত্যাচারে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আবার অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছে। এর মধ্যে চন্ডিপুরের সাজেদুল, তেপুখুরিয়ার আবু সাইদ, আমোদপুরের লালন, আড়ানীর সুমন ও সরেরহাট কলেজের প্রভাষক আব্দুস সালাম অন্যতম।
বাজুবাঘা গ্রামের সামাদ জানান,বাজুবাঘা গ্রামে অনেকে সুদের ব্যবসা করে। সাধারণ মানুষ ব্যাংক লোন নিতে গেলে তাদেরকে জমির কাগজ জমা দিতে হয়। এদিক থেকে গ্রামের কোন প্রভাবশালী সুদ ব্যবসায়ী কিংবা সমিতি থেকে ঋণ নিতে জমির কাগজ জমা দিতে হয় না। তাই তারা এ সমস্ত সুদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকেন। এদের মধ্যে বর্তমানে অনেকেই সুদের টাকা দিতে না পেরে বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এ নিয়ে সুদ ব্যবসায়ীরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাঘার এক সুদ ব্যবসায়ী জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক থেকে সিসি লোন নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। তাদের দাবি, মানুষ যতোটা বলে, ঠিক ততোটা নয়। ব্যাংক তাদের কাছে যে পরিমাণ সুদ নেয়, তার চেয়ে সামান্য কিছু বেশি হারে তারা মানুষকে টাকা দিয়ে থাকেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, সুদ গ্রহিতাদের নানামুখী নির্যাতন ও সুদখোরদের এমন নিপীড়নের কথা লোকমুখে শোনা যায়। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয় না। তবে যদি কেউ ফৌজদারি অপরাধ করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নিতে পারে পুলিশ।
No comments