Header Ads

  • সর্বশেষ খবর

    অধ্যক্ষ ইসাহাক আলীর স্বর্ণপদক অর্জন||rajshahirdorpon24

     

    অধ্যক্ষ ইসাহাক আলীর স্বর্ণপদক অর্জন

    আলিফ হোসেন তানোর

    রাজশাহীর তানোরসহ বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদে বিশেষ করে নারী শিক্ষা বিস্তারে অধ্যক্ষ ইসাহাক আলী অনন্য অবদান রেখে চলেছেন। তাকে গ্রামীণ জনপদে শিক্ষা বিস্তারের মহানায়ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার কারিগর বলা হয়। 


    জানা গেছে, বিগত ১৯৯৪ সালে অধ্যক্ষ ইসাহাক আলী তার নিজস্ব সম্পত্তি দান করে সেখানে তানোর মহিলা ডিগ্রী কলেজ স্থাপন করেন। অন্যদিকে ২০১০ সালে তিনি তানোর কৃষি প্রযুক্তি ইন্সটিটিউট স্থাপন করেছেন। এ ছাড়াও চাপড়া উচ্চ বিদ্যালয়, চাপড়া এতিমখানা এ্যান্ড দাখিল মাদরাসা তার হাতে গড়ে তোলা হয়েছে। আবার চাপড়া জামে মসজিদ, গুবিরপাড়া জামে মসজিদ,মিরাপাড়া জামে মসজিদ ও আমশো জামে মসজিদ ও তানোর প্রেসক্লাবসহ তার হাতে ধমীয়-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক এমন অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। 


    এদিকে শিক্ষা বিস্তারে অসামান্য অবদায় রাখায় (প্রথম আলো-গ্রামীণ ফোন) সম্মাননা ০৬ এ্যাওয়ার্ড, ড, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সম্মামনা পুরুস্কার ২০১৯ ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্বর্ণপদক ২০১৯ অর্জন করেছেন অধ্যক্ষ ইসাহাক আলী। জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোলে মাষ্টার্স করা ইসাহাক আলী ব্যবসা করলেও শিক্ষার প্রতি আর্কষন ছিলো সহজাত। নিজের মেয়ে না থাকায় এলাকার বিশেষ করে দরিদ্র ঘরের মেয়েদের উচ্চশিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ার ঘটনা তাকে কষ্ট দিতো। তখন থেকেই প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকা চাপড়ায় একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার চিন্তা তার মাথায় ভর করে। আগ পিছ না ভেবেই ইসাহাক ও তার স্ত্রী শিরিন সুলতানা আলোচনা করে বিলকুমারীর ধারে নিজেদের ৩ একর সাড়ে ২৭ শতাংশ জমি ছেড়ে দিলেন একটা মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য। শিক্ষানুরাগী ইসাহাক আলী তার উপার্জিত সমুদয় অর্থ দিয়ে ১৪০ফুট একটা টিনশেড ভবন তৈরী করে ওই বছরই প্রতিষ্ঠা করলেন তানোর মহিলা কলেজ, অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিলেন নিজেই। বিনামূল্যে লেখাপড়া ও থাকা খাওয়ার সুযোগের খবর পেয়ে রাজশাহীর, তানোর, মোহনপুর, গোদাগাড়ী, নওগাঁর মান্দা, নিয়ামতপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জের রহনপুর, নাচোলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার অভাবী পরিবারের মেয়েরা এখানে পড়তেএলেন। ১৫৪ জন ছাত্রী নিয়ে কলেজের যাত্রা শুরু হলো।


    শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়োগ সবই হলো। কিন্ত যাদের জন্য এতকিছু তারা অর্থের অভাবে এতো দুরের কলেজে লেখা পড়া করতে আসতে পারছেনা। অনেক ভেবেচিন্তে অধ্যক্ষ নিজের ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহত মাইক্রোবাসটি কলেজের ছাত্রীদের আনা নেয়ার জন্য ছেড়ে দিলেন। এ খবরে এলাকার ছাত্রী অভিবাবকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়ে গেল। দুরদুরান্ত থেকে অনেক ছাত্রী এসে ভর্তি হলেন। ছাত্রী সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আবারো চিন্তায় পড়লেন অধ্যক্ষ। ভেবেচিন্তে এবার যে সমাধান বের করলেন তার কোন তুলনা নেই। নিজের বসবাসের ২৫কক্ষ বিশিস্ট বাড়িটি তিনি ছেড়ে দিলেন ছাত্রী নিবাসের জন্য।


    জানা গেছে, অধ্যক্ষ ইসাহাক আলীর হাতে গড়া প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তানোর (চাপড়া) মহিলা ডিগ্রী কলেজ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের নারীদের শিক্ষাদানে ব্যাপক অবদান ও নজির বিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কলেজটির সব থেকে বড় সুবিধা হলো কলেজ হোষ্টেলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে থাকা খাওয়ার জন্য কোন অর্থ গ্রহণ করা হয় না। 


    এখানে সম্পূর্ণ বিনা খরচে শিক্ষার্থীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিনা খরচে ছাত্রীদের থাকা-খাওয়া ও লেখা পড়ার করার সুযোগ করে দেওয়া এবং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র ও অভাবী মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহনে সহায়তা ও অবদানের জন্য কলেজটি ইতমধ্যে মডেল হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেছে। অভাবের কারনে যে সমস্ত মেয়েদের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহদ্দিতে পা রাখা সম্ভব হয় না, তাদের জন্য তানোর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে’তানোর মহিলা ডিগ্রী কলেজ’। এখানে শিক্ষা দেয়া হয় বিনা বেতনে। আবাশিক ছাত্রীদের থাকা-খাওয়া ফ্রি। কলেজের অধ্যক্ষ ইসাহাক আলীর উদ্দ্যোগে শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন-ভাতার প্রাপ্য টাকা থেকে এ খরচ চালানো হয়ে আসছে। ১৯৯৪ সালের আগে তানোরে কোন মহিলা কলেজ ছিলনা এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ইসাহাক আলী নিজ উদ্দ্যোগ ও প্রচেষ্টায় ১৯৯৩ সালে কলেজ টি প্রতিষ্ঠা করে এবং ১৯৯৪-৯৫ সালে একাডেমিক স্বিকৃতি লাভ করে। ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষা বর্ষে উন্নীত হয় ডিগ্রী কলেজে। অধ্যক্ষের আবেদনের ভিত্তিত্বে ২০০১ সালে বিএম খোলার অনুমতি দেয় সংশ্লিষ্ট কতৃৃপক্ষ। 


    এ ব্যাপারে তানোর মহিলা ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ইসাহাক আলী জানান, প্রত্যন্ত এলাকার অধিকাংশ হত-দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের মেধা থাকা সত্ত্বেও কেবল অভাবের কারনে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায়না। হয় তাদের অকালে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়, নইতো বাবার সংসারেই বোঝা হয়ে থাকতে হয়। তিনি মনে করেন সত্যিকারের নারী শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হলে এই পশ্চাৎপদ মেয়েদেরও উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিতে হবে। তাদের চাই এমন একটি ব্যতিক্রমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে তারা বিনা পয়শায় থাকা খাওয়া ও লেখাপড়া করার সুযোগ পাবে। এই চিন্তার ফসল এই কলেজ। তিনি আশা করেন কলেজটি সরকারী করা হলে মেয়েদের জন্য আরো সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে তিনি নারী শিক্ষায় আরো বেশী ভূমিকা রাখতে পারবেন। 


    এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, গ্রাম পর্যায়ে মেয়েদের জন্য এ ধরনের বিনে পয়সায় থাকা খাওয়া ও পড়ালেখা করার সুবিধে দেখে তিনি অভিভূত হয়েছেন। এ রকম আর কোথাও আছে বলে তার জানা নেই। 

    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728