'অপরাধ ঢাকতে উর্ধ্বতন পুলিশের সোর্স পরিচয়’!||rajshahirdorpon24
স্টাফ রিপোর্টার:
পরিচয় দেওয়ার মতো বাস্তবে কোন পেশাই নেই রাব্বি হোসেনের। জায়গা জমিও তেমন নেই। তবে তিনি চড়েন দামী মোটরসাইকেলে। পরিচয় দেন পুলিশের আইজিপিসহ উর্ধ্বতন পুলিশের কর্মকর্তার সোর্স হিসেবে। উচ্চ পর্যায়ের জনপ্রতিনিধির সাথেও ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে বলেও প্রচার করেন। এভাবেই নিজেকে প্রচার করে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছেন রাব্বি হোসেন (২৭)। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর তার বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তার বাড়ি রাজশাহীর বাঘা পৌরসভার চক নারায়নপুর গ্রামে। পিতার নাম আসাদুল ইসলাম ওরফে ভেগল।
পুলিশ জানায়, রাব্বি হোসেন আইজিপির সহ উর্ধ্বতন পুলিশের কর্মকর্তার সোর্স প্রতারণার অভিনব কার্যক্রম শুরু করেন। নিজেকে কথিত উচ্চ পদস্ত কর্মকতার ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচয় দেওয়া শুরু করেন। বিভিন্ন এলাকার লোকজনকে বলতেন, তার সাথে উচ্চ পদস্ত কর্মকতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কোন প্রয়োজন হলে কাজ করে দিতে পারবেন।
এসব বলে বিভিন্ন এলাকার লোকদের কাছে নিজেকে জাহির করতেন। যাদের আর্থিক অব¯’া ভালো দেখতেন, তাদের টার্গেট করতেন। তার কথা শুনে এলাকার কিছু মানুষও তদবির পেতে যেতেন তার কাছে। এজন্য বলতেন টাকা ঘুষ দিতে হবে। আর কৌশলগত কারণে নিজের অপরাধকে আড়াল করে একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি পরিচয় দিয়ে সুবিধা নিতেন মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মানুষের কাছে। তার অপরাধ প্রতিরোধে কেউ কোন পদক্ষেপ নিলে,তার বিরুদ্ধে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট অসত্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে হয়রানি করতো। কিন্ত সে নিজেই আগে থেকে মাদক,ইমু ও বিকাশ হ্যাকিং ছাড়াও অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। গত এপ্রিল মাসের ৪ তারিখ রাব্বি হাসান সহ চার যুবককে মাদক সেবন করা অবস্থায় উপজলার খানপুর থেকে হাফ বোতল ফেন্সিডিল, ২ পিচ ইয়াবা এবং দু’টি দামি মাটর সাইকেল সহ গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তার নামে বিভিন্ন থানায় মাদক সহ বিভিন্ন অপরাধে ৭/৮টি মামলা রয়েছে বলে জানায় পুলিশ। গত ২৯ এপ্রিল রাব্বি হোসেনসহ তার কয়েকজন সহযোগীদের বিরুদ্ধে পেনাল কোড আইনের ধারাসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ,প্রতারণা,ভীতি প্রদর্শন ও সন্মানহানিকর উদ্দেশ্যে অপপ্রচার এবং সহায়তার অপরাধে অরো একটি মামলা হয়েছে। এই মামলায় ২৯ এপ্রিল (বৃহসপতিবার) রাতে নিজ বাড়ি থেকে রাব্বি হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জব্দ করা মুঠোফোনে বড়ভাই,ইমোভাইসহ নামিদামী লোকজনের নাম সেভ করা ছিল বলে জানা গেছে।
গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা মাসুদ রানা তিলু জানান, আমার এলাকায় বাড়ি হলেও আগে তাকে সেভাবে চিনতামনা। অপকর্মের অভিযোগে একাধিক মামলার পর, তার বিষয়ে জানতে পারি। আমি নিজেও তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি।
খানপুর গ্রামের বাসিন্দা ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রোকনুজ্জামান রিন্টু , গড়গড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম (রবি) জানান, ৪জনকে তাঁেদর এলাকা থেকে প্রেফতার করেছিল পুলিশ। তারা মাদক ব্যবসাসহ ইমো-বিকাশ হ্যাকার হিসাবে এ্যলাকায় অনেকের কাছে পরিচিত। নিজেরাও মাদক সেবন করে। এসব লোকজনের কারণে একদিকে যুব সমাজ ধ্বংস হচ্ছে অন্যদিকে প্রতারিত হয়ে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অনেক মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার বাইরের লোক এই উপজেলার সীমান্ত এলাকায় ঘোরা ফেরা করলেই তাদের পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতো। আস্তা অর্জনে অনেককে ধরিয়ে দেওয়ার কারণে পুলিশের সাথে সখ্যতাও গড়ে উঠে তার। আর সম্ভবত কারণেই নিজের অপকর্ম থেকেও রেহাই পেত রাব্বি ও তার অনুগতরা সাঙ্গ-পাঙ্গ। তারা জানান, বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো না হলেও সে দামি মোটর সাইকেল এবং দামি স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে। জব্দ করা নম্বর বিহীন মোটর সাইকেলসহ ৪ জনের কাছে ৮ টি স্মার্ট ফোন ছিল। কিন্ত রহস্য জনক কারনে সেই ফোন গুলো জব্দ করেনি পুলিশ।
স্থানীয় সাংবাদিক নুরুজ্জমান বলেন, তার অপকর্মের বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে তার ফেসবুক আইডিতে অসত্য, মিথ্যা কথা লিখে প্রচারনার মাধ্যমে সামাজিকভাকে হেয় করার অপচেষ্টা চালায়।
বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলাম বলেন, আস্তা অর্জনের জন্য তার মুঠোফোনে জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের নাম সেভ করে রাখতেন। প্রয়োজনে সেগুলো শো করতেন। আস্তা অর্জনের জন্য প্রাথমিকভাবে কিছু কাজ হয়তো দেখিয়েছেন। এসব কারণে মানুষ তাকে বিশ্বাস করে। এই কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন নামে সেভ করা মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। বিষয় গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
No comments