কোটি টাকা, অস্ত্র-মাদকে ভুরপুর ছিলো আড়ানীর পৌর মেয়রের বাড়ি, স্ত্রীসহ গ্রেফতার তিন!||rajshahirdorpon24
কোটি টাকা, অস্ত্র-মাদকে ভুরপুর ছিলো আড়ানীর পৌর মেয়রের বাড়ি, স্ত্রীসহ গ্রেফতার তিন! |
স্টাফ রিপোর্টার,বাঘা:
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার মেয়রের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা, দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও হেরোইন, ইয়াবা ও গাঁজা উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৬ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটার দিকে অভিযান চালিয়ে মেয়রের স্ত্রী জেসমিন আকতার ও দুই ভাতিজাকে আটক করে পুলিশ। এই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, মুক্তার আলীর বাড়ির ঘরের মধ্যে আলমারির ড্রয়ার টান দিতেই পুলিশ কর্মকর্তাদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় বিপুল পরিমাণ টাকা, অস্ত্র এবং মাদক দেখে।
এনিয়ে বুধবার (৭ জুলাই) দুপুর একটায় রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং এই তথ্য জানান- পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। আটককৃত অন্য দুজন হলেন- মেয়রের ভাতিজা সোহান (২৫) ও শান্ত (২৩)।
প্রেস ব্রিফিং-এ জানানো হয়- মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মেয়র মুক্তার আলী মদ্যপ অবস্থায় তার দলবল নিয়ে আড়ানী পৌরসভার জয়বাংলা মোড়ে নাটোরের বাগাতিপাড়ার বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন মজনুর বাড়ি সংলগ্ন ওষুধের দোকানে গিয়ে হট্টগোল শুরু করে। মেয়র ও তার দলবলের ভয়ে মজনু বাড়ির ভিতরে চলে গেলে মেয়র ও তার সহযোগীরা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে মজনুকে মারপিট শুরু করে। মজনুর কলেজ পড়ুয়া ছেলে এবং স্কুল শিক্ষক স্ত্রী মজনুকে রক্ষা করতে এলে মেয়র তাদেরকেও মারপিট করে আহত করে।
প্রেস ব্রিফিং-এ আরো জানানো হয়- মজনু গত পৌর নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পক্ষ নিয়ে মেয়রের বিপক্ষে নির্বাচনে কাজ করেছিল। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিন রাতেই ভুক্তভোগি মনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মেয়র মুক্তার আলী (৪৫), সোহরাব আলী ওরফে মন্টুর ছেলে আঙ্গুরের (৩২) নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৩ থেকে ৪ জনের বিরুদ্ধে বাঘা থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার পরে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম এবং সহকারী পুলিশ সুপার ডিএসবি (চারঘাট সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রুবেল আহমেদের নেতৃত্বে বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলামসহ পুলিশের একটি দল মেয়র ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারে অভিযান চালায়। অভিযানের এক পর্যায়ে মেয়রের সন্ধানে তার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি পালিয়ে যান।
এসময় তার বাড়ি থেকে একটি ৭.৬৫ অটোমেটিক বিদেশি পিস্তল, ৭.৬৫ পিস্তলের ৪টি ম্যাগজিন, ৭.৬৫ পিস্তলের ১৭ রাউণ্ড তাজা গুলি, ৭.৬৫ পিস্তলের ৪টি গুলির খোসা, একটি ওয়ান শুটার গান, একটি দেশি তৈরি বন্দুক, একটি এয়ার রাইফেল, শটগানের ২৬ রাউন্ড গুলি, ১০ গ্রাম গাঁজা, ৭ পুরিয়া হেরোইন, ২০ পিস ইয়াবা, ১৮ লাখ টাকার স্বাক্ষর করা চেক এবং নগদ ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
প্রেস ব্রিফিং-এ আরো জানানো হয়- মেয়রের বাড়িতে পাওয়া কোন অস্ত্রেরই লাইসেন্স ছিল না। উদ্ধারকৃত টাকার কোন জবাব তারা দিতে না পারায় উদ্ধারকৃত সকল অস্ত্র ও টাকা জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় পলাতক মেয়র মুক্তারকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যহত আছে। এছাড়া গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিং-এ অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সনাতন চক্রবর্তী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. ইফতে খায়ের আলম, সহকারী পুলিশ সুপার (গোদাগাড়ী সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান, সহকারী পুলিশ সুপার (ডিএসবি ও চারঘাট সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রুবেল আহমেদ এবং বাঘা থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
No comments