৫৫ বছর ধরে ছুটছেন নরসুন্দর মনোরঞ্জন শীল ||rajshahirdorpon24
৫৫ বছর ধরে ছুটছেন নরসুন্দর মনোরঞ্জন শীল |
মোঃজিল্লুর রহমান চারঘাট(রাজশাহী) প্রতিনিধি:
একসময় হাট-বাজার ও গ্রামাঞ্চলে পিঁড়িতে বসে চুল-দাড়ি কেটে নিতেন সকল বয়সী পুরুষেরা। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামাঞ্চলের এই ঐতিহ্য। আর এই ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে চুল-দাড়ি কাটতে এখনো গ্রামাঞ্চলে ছুটেন নরসুন্দর মনোরঞ্জন শীল। গত মঙ্গলবার সকালে চারঘাট উপজেলার সরদহ ইউনিয়নের খোর্দগোবিন্দপুর গ্রামে মাটিতে বসে চুল কাটতে দেখা যায় নরসুন্দর মনোরঞ্জন শীল (৭১)কে। এসময় মাটি ঘেঁষা ইটে বসে চুল কেটে নিচ্ছিলেন মুকবেল হোসেন (৬৫) নামের এক ব্যক্তি।
জানা যায়, প্রায় দুই দশক আগে প্রত্যেকটি হাট-বাজারে সারিবদ্ধভাবে বসে চুল-দাড়ি কামানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করতেন নরসুন্দর পেশাজীবীরা। আর মাটিতে পিঁড়ি-ইটের ওপরে বসে মাথার চুল কেটে নেওয়াসহ দাড়ি সেভ করে নিতে সিরিয়ালে অপেক্ষা করতেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার পুরুষরা। এরপর নিজের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে পর্যায়ক্রমে কাজ করিয়ে নিতেন অপেক্ষমান পুরুষরা। এসময় নরসুন্দরদের কেচির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠতো নাপিত পট্টি। শুধু হাট-বাজারই নয়, গ্রামাঞ্চলের গাছের ছায়ার তলে নরসুন্দরদের হাঁটুর কাছে মাথা পেতে চুল-দাড়ি কেটে নিত শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধরা।
সেই সময়ে সেভ করতে ছিল না ব্লেড। লোহার তৈরি ধারালো খুর দিয়ে দাড়ি কাটা হতো। আর দাড়ি নরম করতে মুখে লাগানো হতো সাবান। হাতের ঘর্ষণে এই সাবানের ফেনা তুলে করা হতো ক্লিন সেভ। কিন্তু কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে এই ঐতিহ্য। এখন আর দেখা যায় না নরসুন্দরদের হাট-বাজারে সারিবদ্ধ বসে থাকা। এটি এখন দখল করে নিয়েছে হেয়ার কাটিং সেন্টার, সেলুন। যার ফলে সেই সময়ের অনেক নরসুন্দর ছিটকে গেছে এ পেশা থেকে। নরোসুন্দর মনোরঞ্জন শীল জানান, ১৫ বছর বয়স থেকে তিনি এ পেশায় জড়িত। প্রায় ৫৫ বছর ধরে নরসুন্দর পেশায় জড়িত। আগের দিনে হাট-বাজার ও গ্রামের গাছতলায় বসে চুল-দাড়ি কামানোর কাজটি করতেন।
এ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। কিন্তু এখন আর আগের মত কউ কাজ করায় না। সাবাই বিভিন্ন সেলুনে কিংবা নিজেই বাড়িতে সেভ করে নেন। তিনি আরো বলেন, জীবিকার তাগিদে এখনো ধরে রয়েছি পেশাটি। এখনো গ্রামাঞ্চলের কতিপয় প্রবীণ পুরুষরা আমার কাছে কাজ করিয়ে নেয়। প্রত্যেক জনের চুল কাটা ২০ টাকা ও সেভ করা ১০ টাকা হারে কাজটি করি আমি। এদিকে তার খদ্দের মুকবেল হোসেন বলেন, বয়স বেশি হওয়া চুল-দাড়ি ঠিক করতে সেলুনে যাওয়া সম্ভব হয় না। তাই গ্রামে আসা নাপিতের কাছে বাড়িতে বসে কাজ করিয়ে নিতে হয়।
No comments