বিএমডিএ'র নির্বাহী ও সহকারী প্রকৌশলী দায় এড়াতে পারে না||rajshahirdorpon24
বিএমডিএ'র নির্বাহী ও সহকারী প্রকৌশলী দায় এড়াতে পারে না |
আলিফ হোসেন,তানোরঃ
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে আদিবাসী দুই কৃষকের আত্মহত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে এবার বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সদর দপ্তর ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষকেরা।জানা গেছে, ১১ এপ্রিল সোমবার দুপুরে কয়েক শত আদিবাসী নারী-পুরুষ বিএমডিএ সদর দপ্তরের সামনে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ ও ঘেরাও করে রাখে। এ সময় আত্মহত্যা করা কৃষক অভিনাথ মারান্ডির স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম ও রবি মারান্ডির ভাই সুশীল মারান্ডিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।এর আগে, তারা রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটি এই কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে সহযোগিতা করে রক্ষাগোলার সংগঠক বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অফ ভলান্টারী অর্গানাইজেশন (সিসিবিভিও)।মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়। এতে দুই কৃষকের আত্মহত্যার জন্য দায়ীদের বিচার এবং সেচ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর দাবি জানানো হয়। স্মারকলিপিতে আত্মহত্যা করা কৃষক অভিনাথ মারান্ডির স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম ও রবি মারান্ডির ভাই সুশীল মারান্ডি; রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটির সভাপতি সরল এক্কা, উপদেষ্টা প্রসেন এক্কা, সদস্য রঞ্জিত পাহাড়িয়া ও সিসিবিভিও প্রতিনিধি মো. আরিফ স্বাক্ষর করেন।
স্মারকলিপি দেওয়ার পর কয়েক শত আদিবাসী নারী-পুরুষ ও কিশোর-কিশোরীরা বিএমডিএ সদর দপ্তরে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের কথা বলা হলে পুলিশ তাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়। পরে একটি প্রতিনিধি দল বিএমডিএ’র ভারপ্রাপ্ত সচিব ইকবাল হোসেনকে একটি স্মারকলিপি দেন। এ সময় দুই কৃষকের স্বজনেরা ছাড়াও উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণ কুমার সরকার এবং সিসিবিভিও প্রতিনিধি মো. আরিফসহ রক্ষাগোলা কমিটির কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এরপর দুপুরে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি শেষে তারা ফিরে যান কৃষকেরা। তবে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে তারা আবার আসবেন বলে জানিয়ে যান।প্রসঙ্গত, গত ২৩ মার্চ গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউপির নিমঘুটু গ্রামের কৃষক অভিনাথ ও তার চাচাতো রবি বিষপান করলে তাদের মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি, বিএমডিএ’র গভীর নলকূপ থেকে সেচের পানি না দেওয়ায় দুই কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় দুটি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করা হয়। পুলিশ মামলার একমাত্র আসামি গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি এখন কারাগারে। গ্রেপ্তারের পর সাখাওয়াতকে চাকরিচ্যুত করেছে বিএমডিএ। তবে বিএমডিএ ও পুলিশ-প্রশাসন ঘটনা ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকদের দাবি বিএমডিএ'র নির্বাহী প্রকৌশলী ও কাঁকনহাট জোনের সহকারী প্রকৌশলী এর দায় কোনো ভাবেই এড়াতে পারে না। তাদের হঠকারিতার কারনেই দু'কৃষক আত্মহত্যা করেছে, অপারেটর উপলক্ষ মাত্র। কারণ হিসেবে তারা বলছে,দুর্নীতিপরায়ণ অপারেটর বদলের জন্য ২০২০ ও ২০২১ সালে বিএমডিএতে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন কৃষকেরা।স্থানীয় সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী দুটি অভিযোগ পত্রেই সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে দিয়েছিলেন। কিন্ত্ত রহস্যজনক কারণে অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নির্বাহী প্রকৌশলী ও কাঁকনহাট জোনের সহকারী প্রকৌশলী সাংসদের নির্দেশ উপেক্ষা করেই সাখাওয়াতকে অপারেটর হিসেবে বহাল রাখেন।এর মধ্যেই কৃষি জমিতে পানি না পেয়ে দুই জন কৃষক আত্মহত্যা করে। সাংসদের নির্দেশ বাস্তবায়ন করে নতুন অপারেটর নিয়োগ করা হলে আজ এই দৃশ্যে দেখতে হতো না। তাই বিএমডিএ'র নির্বাহী প্রকৌশলী ও কাঁকনহাট জোনের সহকারী প্রকৌশলী কোনো ভাবেই এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার দায় এড়াতে পারে না।
তারা বলেন, যেসব কর্মকর্তা সাংসদের সুপারিশ অমান্য ও আর্থিক সুবিধা নিয়ে সাখাওয়াতের অপারেটর বহাল রেখেছিল তাদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিৎ তারা এর দায় এড়াতে পারে না।
No comments