Header Ads

  • সর্বশেষ খবর

    চারঘাটে খেজুরের গুড় তৈরির উৎসব: ঐতিহ্যের মিষ্টি ঘ্রাণে মুখরিত শীতের সকাল

     

    খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ

    আব্দুল মতিন, চারঘাট রাজশাহী:

    রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় শীতের আগমনের সঙ্গে শুরু হয়েছে খেজুরের গুড় তৈরির মৌসুম। ভোরবেলার কুয়াশা ভেদ করে গাছিদের কর্মচাঞ্চল্য যেন এলাকার পরিবেশকে সজীব করে তুলেছে। শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে গাছিরা দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ এবং সেই রস থেকে সুস্বাদু গুড় তৈরি করতে।


    চারঘাটের প্রত্যন্ত গ্রামগুলো এখন যেন একটি খেজুরগুড়ের কারখানায় পরিণত হয়েছে। গাছিরা খেজুরগাছের গোড়া পরিষ্কার করে মাটি থেকে প্রায় ৪-৫ ফুট উঁচুতে ভাঁজ তৈরি করছেন। রাতে গাছ থেকে সংগ্রহ করা রস সকালে বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে জ্বাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে ঝোলা গুড় ও পাটালি।



    চারঘাটের জোতরঘু গ্রামের এক অভিজ্ঞ গাছি মো. মুনসাদ রহমান জানান, “প্রতি শীতেই আমরা গুড় তৈরি করি। এই সময়ে খেজুরগাছ থেকে যে রস পাই, তা আমাদের জীবিকার বড় অবলম্বন। তবে, এখন খেজুরগাছ কমে যাওয়ায় আগের মতো রস পাওয়া যায় না। তবুও আমাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।”


    অপর এক গাছি কদম আলী বলেন, “খাঁটি খেজুরগুড়ের চাহিদা অনেক বেশি। আমরা চেষ্টা করি ভালো মানের গুড় তৈরি করতে। সারা দেশে চারঘাটের গুড়ের একটা আলাদা পরিচিতি আছে।”



    স্থানীয় বাজারে এক ব্যবসায়ী রাজু আহমেদ বলেন, “এই মৌসুমে খেজুরের পাটালি ও ঝোলা গুড় বিক্রি করি। ভালো মানের গুড়ের দাম প্রতি কেজি ১৫০-২২০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। ক্রেতারাও খুব আগ্রহ নিয়ে কিনছেন, কারণ এটা খাঁটি ও সুস্বাদু।”


    এক ক্রেতা রুনা বেগম বলেন, “শীত মানেই খেজুরের গুড়। এটা শুধু খাবার নয়, আমাদের সংস্কৃতির অংশ। বাজার থেকে খাঁটি গুড় পেলে আমি খুব খুশি হই।”



    চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, “খেজুরগাছ ও গুড় আমাদের ঐতিহ্যবাহী সম্পদ। এটি কেবল আমাদের সংস্কৃতি নয়, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা গাছিদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য কাজ করছি, যাতে গুড় উৎপাদন আরও বাড়ে এবং তারা ভালো আয় করতে পারেন।”



    চারঘাটের খেজুরগুড় শুধু স্থানীয় চাহিদা মেটাচ্ছে না, বরং দেশের বাইরেও রপ্তানির সম্ভাবনা তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই শিল্প থেকে আরও বেশি আয় করা সম্ভব।


    শীত যতই তীব্র হবে, গুড় তৈরির ব্যস্ততা ততই বাড়বে। খেজুরগুড়ের মিষ্টি ঘ্রাণে মুখরিত চারঘাট শীতের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে স্থানীয় জনগণ ও প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করলে চারঘাটের গুড় আরও ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

    No comments

    Post Top Ad

    ad728

    Post Bottom Ad

    ad728