"মানবতার আলো মোস্তফা কামাল: এক বছর পরেও সবার মনে জীবন্ত"
![]() |
"মানবতার আলো মোস্তফা কামাল: এক বছর পরেও সবার মনে জীবন্ত" |
আব্দুল মতিন, চারঘাট (রাজশাহী):
সমাজসেবায় নিবেদিতপ্রাণ, দরিদ্রদের আশ্রয়স্থল, জোতরঘু জামে মসজিদের সভাপতি ও বিশিষ্ট হোমিও চিকিৎসক মোস্তফা কামালের প্রয়াণের এক বছর পূর্ণ হলো। কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতি এখনো এলাকাবাসীর হৃদয়ে গভীর শূন্যতা সৃষ্টি করে রেখেছে। তিনি ছিলেন এমন একজন মানুষ, যিনি নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে, মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা, মসজিদ-মাদ্রাসার উন্নয়ন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো—এসবই ছিল তাঁর নিত্যদিনের কাজ। এলাকার মানুষের মতে, "তিনি শুধু একজন চিকিৎসক ছিলেন না, ছিলেন সমাজের অভিভাবক।" আজও তাঁর নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়, তাঁর ভালো কাজগুলো অনুপ্রেরণা হয়ে বেঁচে আছে মানুষের মাঝে।
মোস্তফা কামাল চিকিৎসক হলেও তাঁর পরিচয় কেবল এটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি ছিলেন এক অসহায়দের ত্রাণকর্তা।
যখন কেউ অসুস্থ হয়ে তাঁর কাছে আসত, তিনি কখনো ফি নিতেন না। বরং নিজের অর্থ দিয়ে ওষুধ কিনে দিতেন। অনেক দরিদ্র পরিবার তাঁর সাহায্যে সুস্থ জীবন ফিরে পেয়েছে।
তিনি জোতরঘু জামে মসজিদের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন মসজিদের উন্নয়নে সবসময় সচেষ্ট ছিলেন। মসজিদের সংস্কার, নতুন স্থাপনা নির্মাণ, ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
বাড়ি-ঘর নেই, খাবার নেই, চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই—এমন অনেক মানুষ তাঁর দয়ায় বেঁচে থেকেছে। তিনি কাউকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতেন না। নিজের কষ্ট করে উপার্জিত অর্থও গরিবদের সাহায্যে ব্যয় করতেন।
মোস্তফা কামালের বড় ছেলে মাহমুদুল হাসান তুষার তাঁর বাবার মতোই একজন হোমিও চিকিৎসক। বাবার দেখানো পথ অনুসরণ করে তিনিও মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। ছোট ছেলেটি এখনো পড়াশোনা করছে, তবে বাবার শিক্ষা ও নীতি তাকে একজন সৎ ও মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে বলে আশাবাদী এলাকাবাসী।
মোস্তফা কামালের মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার আজও মানুষের দোয়া ও ভালোবাসার আশ্রয়স্থল। এলাকাবাসী মনে করেন, তাঁর সন্তানরা তাঁর আদর্শ ধরে রাখলে সমাজ আবারো এমন মহৎ মানুষ পাবে।
মসজিদের ইমাম সাহেব বলেন,
"তিনি শুধু একজন সভাপতি ছিলেন না, ছিলেন আমাদের দিকনির্দেশক। যখনই মসজিদের কোনো উন্নয়ন কাজ হতো, তিনি সবার আগে এগিয়ে আসতেন। তাঁর অবদান আমরা কখনো ভুলতে পারবো না।"
স্থানীয় আব্দুল মতিন বলেন,
আমাদের এলাকায় এমন মানুষ আমি দ্বিতীয় দেখিনি। মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা তাঁর স্বভাব ছিল। গরিবরা তাঁর কাছে যেত সাহায্যের জন্য, তিনি কখনো ফিরিয়ে দেননি।"
একজন দরিদ্র রোগী আসিয়া বেগম জানায়,
আমার ছোট ছেলেটা খুব অসুস্থ ছিল। টাকা ছিল না, ওষুধ কেনার উপায় ছিল না। মোস্তফা কামাল চাচা নিজে ওষুধ কিনে দিলেন, আমাদের খাবারের ব্যবস্থাও করলেন। আজ তিনি নেই, কিন্তু তাঁর দয়া আমি কখনো ভুলতে পারবো না।"
এলাকার আরো এক ব্যক্তি আক্কাস সর্দার বলেন:
আমাদের সমাজের উচিত মোস্তফা কামাল ভাই এর মতো হওয়া। তিনি আমাদের দেখিয়ে গেছেন কিভাবে একজন মানুষ সমাজের জন্য কাজ করতে পারে।"
একজন মানুষ মৃত্যুর পরেও যদি মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকেন, তবে বুঝতে হবে তিনি কেবল নিজের জন্য নয়, সমাজের জন্য বেঁচেছিলেন। মোস্তফা কামাল তেমনই একজন মহান ব্যক্তি।
তাঁর অবদান কখনো ভুলবে না এলাকাবাসী। আজকের সমাজে এমন মানুষের বড় প্রয়োজন। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন—এটাই সবার প্রার্থনা।
"ভালো মানুষ কখনো মরে না, তারা মানুষের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকে।
No comments